জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন: সংস্কারে চলচ্চিত্র, পরিবর্তনে দেশ
আজ ঢাকার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন’। জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন: সংস্কারে চলচ্চিত্র, পরিবর্তনে দেশ,বাংলাদেশ ফিল্ম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘সংস্কারে চলচ্চিত্র, পরিবর্তনে দেশ’। বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
সম্মেলনে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করা হবে:
- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের সংস্কার।
- বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) গঠন পরিবর্তন।
- সিনেমার ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন।
- ই-টিকেটিং সার্ভার ও বক্স অফিস ব্যবস্থা।
- জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা।
- টিকিট শেয়ারমানি পদ্ধতি।
- চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রসার।
- গাজীপুর ফিল্ম সিটির উন্নয়ন।
- চলচ্চিত্র আমদানি-রপ্তানি উন্মুক্তকরণ।
- অ্যান্টি পাইরেসি সেল গঠন এবং চলচ্চিত্রে সরকারি বিনিয়োগ।
আয়োজকদের মতে, এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে গণযোগাযোগ, বিনোদন, শিল্পচর্চা ও বাণিজ্যের অন্যতম খাত হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও উন্নয়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করা।
চলচ্চিত্র শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প বর্তমানে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একসময় বছরে ১০০ থেকে ১২০টি চলচ্চিত্র নির্মিত হলেও, বর্তমানে সেই সংখ্যা কমে এসেছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মহাম্মদ হান্নান জানান, “এ বছরে ৩০টিও হবে কিনা সন্দেহ। যা হবে তাও অতি নিম্নমানের।”
চলচ্চিত্র ব্যবসার এই পতনের পেছনে ভালো চলচ্চিত্রের অভাব, দর্শকদের হলবিমুখতা, প্রযোজকদের বিনিয়োগভীতি, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের ঘাটতি অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে, শিল্পী ও কুশলীদের সংকট আরও গভীরতর হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, “প্রযোজক ও পরিচালকদের পেশাদারিত্বের অভাব এবং বিনোদন নির্ভর ছবির স্পষ্ট ধারণার অভাবে একই ধরনের কাহিনীর ছবি বানানো হচ্ছে।”
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, “চলচ্চিত্র জগতের দীর্ঘদিনের স্থবিরতা দূর করতেও সরকার কাজ করছে।”
এছাড়া, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, “চলচ্চিত্র অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মাধ্যম। এ মাধ্যমকে বাংলাদেশে আরও শক্তিমত্তা নিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবেশ তৈরির জন্য অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এবং তাদের মতামত নিয়ে সরকার সবকিছু করবে।”
সরকারের এই পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগ চলচ্চিত্র শিল্পের পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন’ চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন ও সংস্কারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আয়োজকদের এই প্রচেষ্টা এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।