বাংলাদেশ

টয়লেট পরিচালনা প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ যাচ্ছেন ৩ কর্মকর্তা

Advertisement

স্থানীয় সরকার বিভাগের তিন কর্মকর্তা ভ্রাম্যমাণ (ভিআইপি) টয়লেট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে চীন যাচ্ছেন। সরকারি এক আদেশে তাদের এই সফরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সফরটি আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে, অথবা অফিস ছুটির তারিখ থেকে ৭ দিনব্যাপী কার্যকর হবে।

এই প্রশিক্ষণ সফর নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে, কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে পূর্বেও প্রশ্ন উঠেছিল।

প্রশিক্ষণে কারা যাচ্ছেন

সরকারি আদেশ অনুযায়ী, তিন কর্মকর্তা চীন সফরে যাচ্ছেন। তারা হলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফারুক হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এবং উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির হোসেন।

তাদের দায়িত্ব হবে নতুন পাঁচটি ভিআইপি টয়লেটের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ শিখে দেশে এসে তা বাস্তবায়ন করা।

সফরের উদ্দেশ্য

সরকারি নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, পাঁচটি নতুন ভ্রাম্যমাণ ভিআইপি টয়লেটের সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তারা এগুলোর অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। এসব টয়লেট আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত, যাতে যাত্রী ও নগরবাসীর জন্য উন্নতমানের সেবা নিশ্চিত করা যায়।

সফরের সব খরচ বহন করবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শ্যাংডং কিউয়ানবাই ইন্টেলিজেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড।

বিতর্ক ও সমালোচনা

যদিও সফরটিকে অফিসিয়াল দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তবুও এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কারণ সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনো সরবরাহকারী বা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ করা উচিত নয়।

অতীতে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল যে, সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ ব্যয় সরকার বা আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার অর্থায়নে হতে হবে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের টাকায় সফর গ্রহণ স্বার্থসংঘাত তৈরি করতে পারে।

পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা

এটি প্রথম ঘটনা নয়। অতীতেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় কর্মকর্তারা একইভাবে বিদেশ সফরে গেছেন। শুধু স্থানীয় সরকার বিভাগই নয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), আইএমইডি এবং অন্যান্য সংস্থার প্রায় ৩৫ জন কর্মকর্তা ঠিকাদার বা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বিদেশ সফর করেছেন।

সাধারণত নতুন যন্ত্রপাতি, ট্রেইলার, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা চেইন ডোজারের মতো অবকাঠামো ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশিক্ষণকে কারণ দেখিয়ে এসব সফর অনুমোদন দেওয়া হয়।

সরকারি বিধি ও বাস্তবতা

সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, জাতীয় স্বার্থ ছাড়া একসঙ্গে একাধিক কর্মকর্তা বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। আর যদি ভ্রমণ হয় সরকারি অর্থায়নে, তবে তা হতে হবে সীমিত ও অপরিহার্য।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এসব নিয়ম অনেক সময় উপেক্ষিত হচ্ছে। বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব নিয়ে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা আছে। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ে এ ধরনের ভ্রমণ একেবারেই অনৈতিক। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুচিত আনুগত্য তৈরি হয়, যা জনস্বার্থের ক্ষতি করতে পারে।”

অন্য বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, ভিআইপি টয়লেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রয়োজন থাকলেও সেটি সরকারি ব্যয়ে হওয়াই শ্রেয়।

জনমত ও প্রতিক্রিয়া

সাধারণ নাগরিকদের একটি অংশ মনে করছেন, টয়লেট ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি নেই। দেশের ভেতরেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো সম্ভব।

অন্যদিকে, নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিদেশি প্রশিক্ষণ অনেক সময় দরকার হয়। তবে এর অর্থায়ন পদ্ধতি নিয়ে স্বচ্ছতা ও নীতিমালা মেনে চলাই মূল বিষয়।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

এই সফরের মাধ্যমে কর্মকর্তারা নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। তবে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করতে হবে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের মাধ্যমে। একইসঙ্গে বিদেশ সফর সম্পর্কিত সরকারি বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ না করলে ভবিষ্যতে একই ধরনের বিতর্ক আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের এই সফর নিয়ে যেমন আশা রয়েছে, তেমনি সমালোচনাও প্রবল। আধুনিক ভিআইপি টয়লেট ব্যবস্থাপনা নগরজীবনে স্বস্তি আনতে পারে, তবে সফরের অর্থায়ন পদ্ধতি এবং নীতিগত দিক নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এ সফরের মাধ্যমে কর্মকর্তারা কীভাবে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগান এবং বিতর্ক এড়িয়ে স্বচ্ছতার উদাহরণ স্থাপন করতে পারেন।

এম আর এম – ১৪৬৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button