
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও অভিনেতা তাহসান খান হঠাৎই গান ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আয়োজিত এক কনসার্টে ভক্তদের সামনে তিনি এ ঘোষণা দেন। দীর্ঘ আড়াই দশকের সফল সংগীতজীবন পেরিয়ে এভাবে হঠাৎই বিদায়ের কথা বলায় ভক্তরা হয়েছেন হতভম্ব।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীরবতা
তাহসান খানের ফেসবুক পেজে ছিল প্রায় এক কোটি অনুসারী, ইনস্টাগ্রামে ৩৫ লাখের বেশি। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, তাঁর ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ। এ নিয়ে ভক্তরা নানা জল্পনায় মেতে উঠলেও তিনি স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
অস্ট্রেলিয়ায় ট্যুর, ভক্তদের চমক
বর্তমানে তাহসান তাঁর সংগীতজীবনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ায় ট্যুরে আছেন। ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড ও সিডনির কনসার্টে হাজারো দর্শক ভরিয়ে দিয়েছেন অডিটোরিয়াম। গলা মেলিয়েছেন তাহসানের জনপ্রিয় সব গানে। কিন্তু মেলবোর্ন কনসার্টে যখন তিনি ঘোষণা দেন—“এটা শেষ ট্যুর হতে পারে, সংগীতজীবনের ইতি টানব”—তখন মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো হল।
দর্শকের প্রতিক্রিয়া
হঠাৎ এ ঘোষণা শুনে উপস্থিত দর্শকেরা হতভম্ব হয়ে যান। কেউ কেউ জোরে “না না” বলে চিৎকার করেন। অনেকেই চোখের জল মুছতে থাকেন। কিন্তু তাহসান সিদ্ধান্তে অটল থেকে গান চালিয়ে যান।
পরের দিন সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে চাইলে সংক্ষেপে তিনি বলেন,
“একটা সাধারণ জীবনের আশায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
জীবনের অগ্রাধিকার বদলেছে
তাহসান একাধিকবার জানিয়েছেন, তাঁর কাছে সংগীত সবসময় আবেগের জায়গা। তবে সময়ের সঙ্গে জীবনের অগ্রাধিকার বদলেছে। এখন তিনি একজন বাবার ভূমিকায় বেশি দায়িত্বশীল হতে চান। তাঁর একমাত্র মেয়ে বড় হচ্ছে, সেই কারণেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আগের মতো গান গাওয়া তাঁর কাছে আর স্বাভাবিক লাগছে না।
তিনি বলেন,
“সারাজীবন কি মঞ্চে দাঁড়িয়ে লাফালাফি করা যায়? মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে, তার সামনে এইভাবে গান গাওয়া কেমন দেখাবে?”
শেষ কনসার্ট পার্থে
অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে তাঁর ট্যুরের শেষ কনসার্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরপর ধীরে ধীরে তিনি সরে দাঁড়াবেন—এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সংগীতে যাত্রা ও জনপ্রিয়তা
বাংলাদেশি রক ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’-এর হাত ধরে সংগীতে যাত্রা শুরু করেন তাহসান। ১৯৯৮ সালে জন কবির, জাহান ও টনির সঙ্গে ব্যান্ডের শুরু, পরে যোগ দেন তাহসান ও মিরাজ। ২০০২ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম অ্যালবাম “আমার পৃথিবী”, যা তরুণ শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
পরে একক ক্যারিয়ারে এসে গান, নাটক, বিজ্ঞাপন—সব ক্ষেত্রেই নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন তাহসান খান। তাঁর গাওয়া অসংখ্য হিট গান এখনো ভক্তদের মুখে মুখে।
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া সামাজিক মাধ্যমে
তাহসানের ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তরা আবেগঘন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। অনেকে লিখেছেন—“আমরা প্রস্তুত নই তাঁকে বিদায় জানানোর জন্য।” আবার কেউ কেউ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, হয়তো কিছুদিন পর তিনি ফিরে আসবেন। তবে তাহসান স্পষ্ট বলেছেন, গানে ফেরার কোনো পরিকল্পনা নেই।
ব্যক্তিগত জীবনের নতুন অধ্যায়
শিল্পীজীবনের বাইরে তাহসান সবসময়ই একজন শিক্ষিত ও ভদ্র ইমেজের মানুষ হিসেবে পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন, টেলিভিশন নাটকেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এখন তিনি চান, শিল্পী নয়, একজন সাধারণ বাবা ও দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে জীবন কাটাতে।
তাহসানের এই ঘোষণা বাংলাদেশের সংগীতজগতে বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একজন শিল্পীর জন্য গানের মঞ্চ থেকে সরে আসা সহজ নয়। কিন্তু জীবনের অগ্রাধিকার বদলালে সেটাই স্বাভাবিক। অনেক আন্তর্জাতিক তারকারাও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংগীত থেকে বিদায় নিয়েছেন বা বিরতি নিয়েছেন।
তাহসানের ভক্তরা যদিও দুঃখ পেয়েছেন, তবে তাঁর সিদ্ধান্তকে সম্মান করছেন।
MAH – 12950 I Signalbd.com