আবহাওয়া

রাতভর বৃষ্টিতে ঢাকায় জলাবদ্ধতা, সড়কে যানজটের সমস্যায় নগরবাসী

Advertisement

গত রাত থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মিরপুর, মতিঝিল, আরামবাগ, রাজারবাগ, মগবাজার ও মৌচাকসহ শহরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকার অলিগলিতে হাঁটুসমান পানি জমে রয়েছে। বিশেষ করে হাতিরঝিল এলাকার কিছু অংশও পানির নিচে ডুবে আছে। ফলে সাতসকাল থেকেই ঘর থেকে বের হওয়া নগরবাসীর জন্য ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।

ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে জল জমে থাকা ও যানবাহনের চাপের কারণে যানজটের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। ভোগান্তি আরও বেড়েছে জলাবদ্ধতার কারণে। নগরবাসীরা জানাচ্ছেন, সকালে অফিস, স্কুল বা বাজারে যাওয়া এখন আগের তুলনায় অনেক কঠিন হয়ে গেছে।

বৃষ্টির পরিসংখ্যান ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আগামী দুই দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে একটি লঘুচাপ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে, অন্যটি সম্ভবত ২৪ সেপ্টেম্বরের দিকে তৈরি হবে।

আজ সোমবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রায় ৪০ মিলিমিটার। পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, এই সময়ে আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে, যা নগরবাসীর জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ হতে পারে।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির প্রভাব

ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, রাতভর বৃষ্টির কারণে অলিগলিত হাঁটুসমান পানি জমে রয়েছে। বিশেষ করে মিরপুর, মতিঝিল, আরামবাগ, রাজারবাগ, মগবাজার, মৌচাক এবং হাতিরঝিলের কিছু অংশে জলাবদ্ধতার ফলে জনজীবন প্রভাবিত হয়েছে।

ঢাকার বিভিন্ন সড়ক যেমন- পুরানা পল্টন, শাহবাগ, মতিঝিল এবং ধানমন্ডি রোডে চলাচল প্রায় বন্ধের মতো হয়ে গেছে। ফলে, সকালবেলার যানবাহন ও মোটরসাইকেল চলাচল অনেকটা বিঘ্নিত হয়েছে।

নগরবাসীরা সামাজিক মাধ্যমে জানাচ্ছেন, “প্রায় প্রতি বছরই বৃষ্টিতে ঢাকার রাস্তা পানির নিচে চলে যায়। শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এখনো পর্যাপ্ত নয়। ফলে বৃষ্টি মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।”

ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সমস্যা

ঢাকার মতো বড় শহরে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হলো অপ্রতুল এবং অপরিকল্পিত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। বিভিন্ন গলি ও রাস্তায় বৃষ্টির পানি বের করার জন্য নালা থাকলেও সেগুলো প্রায়ই ময়লা ও আবর্জনায় ভর্তি থাকে। এতে করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং শহরের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নিয়মিত পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ করলেও, নগরায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে, জমে থাকা পানি দূর করার জন্য সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন তৎপরতা থাকে, কিন্তু প্রচণ্ড বৃষ্টির সময় তা যথেষ্ট কার্যকর হয় না।

বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট যানজট

আজ সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের কারণে নগরবাসী অস্বস্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে মগবাজার, মতিঝিল, শাহবাগ, ঢাকা কলেজের আশেপাশের সড়কগুলোতে যানজট চোখে পড়ার মতো।

জানাজায়, যানজটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী ও কর্মচারী অফিস, স্কুল ও কলেজে সময়মতো পৌঁছাতে পারছেন না। অনেকেই মোটরসাইকেল বা রিকশা নিয়ে পানি ভিজে সমস্যায় পড়ছেন।

লঘুচাপ ও আবহাওয়া পরিস্থিতি

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে দুটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি লঘুচাপ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে উঠতে পারে, আর দ্বিতীয়টি ২৪ সেপ্টেম্বরের দিকে সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

এই লঘুচাপের প্রভাবে আগামী দু’দিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানাচ্ছেন, এই সময়ে নদী ও খালবিলের পানি উচ্চ স্তরে পৌঁছতে পারে। ফলে ঢাকার নিম্নাঞ্চল আরও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

নাগরিকদের সতর্কবার্তা

ঢাকা শহরের প্রশাসন এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্কবার্তা জারি করেছে। নাগরিকদের বলা হয়েছে, বৃষ্টির সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে ঘর থেকে বের হওয়া এড়াতে। পাশাপাশি, যানজটপূর্ণ এলাকায় যাতায়াত করতে হলে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থদের বাড়ির ভিতরে নিরাপদে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যারা রাস্তা দিয়ে চলাচল করবেন, তাদের বৃষ্টির পানি এবং জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ঘটনা থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নগরবাসীর অভিজ্ঞতা

ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে নগরবাসী জানাচ্ছেন, “গত রাতের বৃষ্টি আমাদের জন্য বড় ধাক্কা। সকাল থেকে অফিস যাওয়ার জন্য বের হতেই বিভিন্ন সড়কে জল জমে থাকা এবং যানজটের কারণে অনেক ভোগান্তি। সরকার যদি দ্রুত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করে, তাহলে এমন সমস্যা কমে আসবে।”

একাধিক এলাকাবাসী সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছেন। তারা জানাচ্ছেন, হাতিরঝিল, মগবাজার, আরামবাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জলাবদ্ধতার কারণে সম্পূর্ণ ভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে।

সমাধানের দিকনির্দেশনা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার মূল কারণ হলো শহরের দ্রুত নগরায়ন এবং অপরিকল্পিত আবাসন।

১. নালা ও খালের পরিচ্ছন্নতা: শহরের সকল নালা ও খালকে ময়লা-আবর্জনা থেকে মুক্ত রাখা জরুরি।
২. পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা শক্তিশালী করা: বর্ষার আগেই প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।
৩. সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ: নতুন সড়ক নির্মাণের সময় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখা।
৪. নাগরিক সচেতনতা: নাগরিকদের সচেতন করা, যেখানে কোথায় কোন এলাকার পানি জমতে পারে এবং কোথায় বৃষ্টি ঝুঁকিপূর্ণ।

ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, আগামী দুই দিন দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। নদী, খাল ও বিলের পানি উচ্চমাত্রায় পৌঁছাতে পারে। নগরায়ণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকার নিম্নাঞ্চল ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।

শহর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে নগরের বিভিন্ন খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে হবে। এছাড়া, নাগরিকদেরও বৃষ্টির সময় বাড়ির ভিতরে থাকাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

রাতভর চলা বৃষ্টির কারণে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এখন জলাবদ্ধ। নগরবাসীর জীবনযাত্রা প্রভাবিত হয়েছে। সরকারি দপ্তর এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তার আলোকে নাগরিকদের সতর্ক থাকা এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে না যাওয়াই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।

জানাযাচ্ছে, আগামী কয়েক দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। তাই ঢাকা শহরের মানুষকে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করতে হবে।

MAH – 12943 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button