মরক্কোর প্রাচীন বন্দরনগরী তাংজিয়ার রাস্তায় গত কয়েক দিনে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিশাল জনতার মধ্যে কেউ ফিলিস্তিনের পতাকা, কেউবা মরক্কোর জাতীয় পতাকা হাতে ধারণ করে বিক্ষোভ মিছিল করছেন।
ভিডিওতে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে, বিক্ষোভকারীরা গাজার চলমান সংঘাতের নিন্দা জানাচ্ছেন এবং ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙার উদ্যোগ ‘গ্লোবাল সামুদ ফ্লোটিলা’ প্রকল্পের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করছেন।
মরক্কোর জনসাধারণের প্রতিবাদ
মরক্কোর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী ও সাধারণ জনগণ এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মিছিলটি শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের অংশ নয়, এটি ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মরক্কোর নাগরিক সমাজের শক্তিশালী প্রতিবাদ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
একজন বিক্ষোভকারীর ভাষ্য, “আমরা ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। শান্তি ও ন্যায়ের জন্য আমরা আমাদের আওয়াজ উচ্চারণ করছি। ইসরায়েলের সহিংসতা এবং অবরোধ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের চলমান হামলার প্রতিবাদে শুধু মরক্কো নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও স্লোগান এবং মানববন্ধন হচ্ছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব ও জেরুজালেমে গত কয়েক দিনে উত্তাল বিক্ষোভ দেখা গেছে।
সেখানে সাধারণ জনগণ ব্যানার এবং পোস্টারসহ সাপ্তাহিক র্যালিতে অংশগ্রহণ করেছেন। বিক্ষোভকারীরা যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি এবং যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন। ট্রাম্পকে জিম্মি মুক্তি চুক্তির জন্য চাপ দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
গাজার সংঘাত ও মানবিক সংকট
গাজার নাগরিকরা সাম্প্রতিক ইসরায়েলি আগ্রাসনে মারাত্মক মানবিক সংকটে পড়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অনুযায়ী, ঘরে ঘরে খাদ্য ও পানির অভাব, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা চরম অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “গাজায় অবরোধ ও হামলার কারণে প্রায় অর্ধেক শিশু স্কুলে যেতে পারছে না, এবং হাজার হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বঞ্চিত।” এই মানবিক সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক সমাজের দিকে গাজার জনগণের প্রতি সহমর্মিতা ও দ্রুত সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জোরদার হচ্ছে।
মরক্কোর সামাজিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থা
মরক্কোর বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছে। তারা বলেছে, “ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি আমাদের নৈতিক কর্তব্য। আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলের সহিংসতা বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিক।”
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে মরক্কোর মানবাধিকার ফোরাম, সিভিল সোসাইটি নেটওয়ার্ক এবং ফিলিস্তিন সমর্থক যুব সংগঠনসমূহ। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ সম্প্রচার ও ভিডিও পোস্টের মাধ্যমে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চালাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ও ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্ষোভের ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ ভিডিও শেয়ার করেছেন এবং হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে #FreePalestine, #StandWithGaza, #MoroccoForPalestine সচেতনতা ছড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই বিক্ষোভকে আন্তর্জাতিক স্তরে দৃশ্যমানতা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজার সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত বিমান হামলা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে গাজার স্কুল, হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকা লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তারা সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রতিরোধে অভিযান চালাচ্ছে, তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, “নিরপেক্ষ নাগরিকদের ওপর আক্রমণ আইনগতভাবে অনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন।”
আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক প্রয়াস
ফিলিস্তিনের সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আরব লীগসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সক্রিয়। তারা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নেতাদের শান্তি আলোচনা শুরু করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, “গাজার জনগণের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিশ্বের নৈতিক দায়িত্ব। যারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে চায়, তাদের আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করা উচিত।”
সম্প্রদায়ের সংহতি ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
মরক্কোর বিক্ষোভ শুধু এক দিনের ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মরক্কোর জনগণের শক্তিশালী রাজনৈতিক এবং সামাজিক মনোভাবের প্রকাশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের গণবিক্ষোভ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ফিলিস্তিনের মানবিক পরিস্থিতি তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
একজন স্থানীয় বিশ্লেষক বলেছেন, “মরক্কোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক নীতি প্রভাবিত করতে সক্ষম। গণমানবিক আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।”
মরক্কোর তাংজিয়ার শহরে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি প্রতিকী বার্তা পাঠিয়েছে। সামাজিক সংগঠন, সাধারণ জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে আশা করা যায়, গাজার মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সাহায্য আরও দ্রুত পৌঁছাবে।
এই আন্দোলন শুধু মানবিকতার উদাহরণ নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। বিশ্ব এখন দেখছে, সাধারণ মানুষ কিভাবে সামাজিক সচেতনতা ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।
MAH – 12932 I Signalbd.com



