
চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন মাশুলের হার এক মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন শনিবার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বন্দরের নতুন মাশুল কার্যকর করার বিষয়টি আরও এক মাসের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘোষণা আসে চট্টগ্রাম বন্দর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘কাস্টমস ও বন্দর ব্যবস্থাপনা: সম্ভাবনা, সমস্যা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক কর্মশালার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে। এই কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন।
উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “শুল্ক ও মাশুল বৃদ্ধির বিষয়ে বন্দরের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নতুন মাশুল কার্যকর করা এক মাসের জন্য স্থগিত থাকবে। বন্দরের চেয়ারম্যানও এতে সম্মত হয়েছেন।”
নতুন মাশুল বৃদ্ধির পটভূমি
চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫২টি খাতে মাশুল আদায় করা হয়। এর মধ্যে ২৩টি খাতে নতুন ট্যারিফ অনুযায়ী মাশুল বাড়ানো হয়। এই মাশুল বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে জারি করা হয়েছিল এবং পরদিন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
প্রজ্ঞাপনের আওতায়, ভাড়া, টোল, রেইল ফি, সেবা খাতের মাশুল এবং অন্যান্য ফি বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিশেষভাবে, ডলারের বিনিময়মূল্য ১২২ টাকা ধরে মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, ডলারের বিনিময়মূল্য বৃদ্ধি পেলে মাশুলও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে।
কনটেইনার পরিবহনে সর্বোচ্চ প্রভাব
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কনটেইনার পরিবহন খাতে।
- ২০ ফুট লম্বা একটি কনটেইনারে পূর্বের মাশুল ছিল ১১,৮৪৯ টাকা, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬,২৪৩ টাকা, অর্থাৎ গড়ে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি।
- আমদানি কনটেইনারের জন্য নতুন মাশুল ৫,৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কনটেইনারের জন্য ৩,০৪৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
- প্রতিটি কনটেইনার ওঠানামার জন্য মাশুল বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৩,০০০ টাকা।
- কনটেইনার প্রতি কেজি পণ্যের মাশুল ১ টাকা ২৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়েছে।
সার্বিকভাবে, কনটেইনার পরিবহন খাতেই মাশুল বেড়েছে ২৫ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত।
বন্দর মাশুল বৃদ্ধির ইতিহাস
চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ানোর এটি প্রথম উদ্যোগ নয়। তবে এর আগের সর্বশেষ ট্যারিফ বৃদ্ধির ঘটনা ঘটে ১৯৮৬ সালে। অর্থাৎ প্রায় ৪০ বছর পর বন্দরের ট্যারিফ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ এবং কনটেইনার ও পণ্য পরিবহনের ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন করে। তাই, বন্দর সংক্রান্ত মাশুলের পরিবর্তন দেশের বাণিজ্য ও ব্যবসায়ের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, “নতুন মাশুল কার্যকর করা এক মাসের জন্য স্থগিত থাকবে। এ সময় ব্যবহারকারীদের জন্য প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।”
ব্যবসায় ও বাণিজ্যের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাশুল বৃদ্ধির স্থগিতকরণ ব্যবসায়ীদের জন্য এক ধরনের অস্থায়ী রেহাই। বিশেষ করে, কনটেইনার পরিবহন খাত ও আমদানি-রপ্তানিতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সময় পাবেন নতুন হিসাব ও ব্যয় পরিকল্পনা করার।
অন্যদিকে, দেশের সামুদ্রিক বাণিজ্য ও লজিস্টিক সেক্টরের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত, কারণ বন্দরের মাশুল সরাসরি ব্যবসায়িক খরচ ও পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে।
মাশুল স্থগিতকরণের গুরুত্ব
- ব্যবসায়ীদের ব্যয় কমানোর সুযোগ
- আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখা
- নতুন মাশুল কার্যকর করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এক মাস পর মাশুল কার্যকর করার সময় পুনঃমূল্যায়ন করা হবে। এই সময় ব্যবসায়ীরা নতুন ট্যারিফ অনুযায়ী তাদের আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবেন। এছাড়াও, বন্দরের ডলারের বিনিময়মূল্য ও বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী ভবিষ্যতে আরও ট্যারিফ পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বৃদ্ধি ও স্থগিতকরণ বিষয়টি দেশের আমদানি-রপ্তানিকেন্দ্রিক বাণিজ্য এবং লজিস্টিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর: দেশের বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর। এটি দেশের সব ধরনের পণ্য পরিবহনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্দর ব্যবস্থাপনা ও ট্যারিফের পরিবর্তন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলে।
বর্তমান স্থগিতকরণ ব্যবসায়ীদের জন্য অস্থায়ী সান্ত্বনা দেয়, তবে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক পরিকল্পনার জন্য নতুন মাশুল কার্যকর হলে তার প্রভাব সরাসরি লক্ষ্য করা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন মাশুল এক মাসের জন্য স্থগিতকরণ দেশের ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরা হচ্ছে। নৌপরিবহন উপদেষ্টার ঘোষণা ও বন্দরের কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এক মাসের এই সময় ব্যবসায়ীরা নতুন পরিকল্পনা করতে পারবে।
MAH – 12931 I Signalbd.com