আবহাওয়া

সিলেটে সুনামগঞ্জ উৎসে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প

Advertisement

সিলেট নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হঠাৎ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪, যা সাধারণভাবে তুলনামূলকভাবে হালকা ধরনের ভূমিকম্প হিসেবে বিবেচিত হয়।

ভূমিকম্পটি ঘটেছে দুপুর ১২টা ১৯ মিনিটে, এবং এর উৎপত্তিস্থল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায়। ঢাকার থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার।

সিলেট শহরের বিভিন্ন অংশে কয়েক সেকেন্ডের জন্য দুলুনি অনুভূত হয়। অনেক নাগরিক আতঙ্কিত হয়ে তড়িঘড়ি করে ঘরবাড়ি, দোকানপাট এবং অফিস থেকে বের হয়ে আসে। তবে আশার কথা হলো, এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ভূমিকম্পের মাত্রা ও প্রভাব

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ভূমিকম্পকে হালকা হিসেবে গণ্য করা হয়। এর প্রভাব সাধারণত মানুষ অনুভব করতে পারে, তবে বড় ধরনের ধ্বংস বা প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে না। হালকা বা মাঝারি ধরনের কম্পনের কারণে পুরনো বা দুর্বল কাঠামোর ভবনে সামান্য ফাটল দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ভূমিকম্পের অনুভূতি মূলত স্থানীয় ভূগর্ভস্থ কণার গতিবিধি ও ভূত্বকের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। সিলেট অঞ্চলে ভূ-তাত্ত্বিক গঠন অপেক্ষাকৃত ভাঙাচোরা এবং তাতেই মানুষের জীবনে অল্প হলেও কম্পনের প্রভাব অনুভূত হয়।

সিলেট অঞ্চলের ভূ-তাত্ত্বিক পরিস্থিতি

সিলেট অঞ্চল বাংলাদেশের অন্যতম ভূ-তাত্ত্বিকভাবে সংবেদনশীল এলাকা। এটি প্রধানত চুনাপাথর ও পাথুরে স্তরের মিশ্রণ দ্বারা গঠিত। ভূ-তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সিলেট অঞ্চলে ছোট-বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা পূর্বেই রয়েছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ অঞ্চলে ভূ-কম্পনের ঘটনা সময়ে সময়ে ঘটছে।

বাংলাদেশ ভূমিকম্প জরিপ কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত দশ বছরে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৩ থেকে ৫ মাত্রার অন্তত ৮ থেকে ১০টি ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই হালকা বা মাঝারি ধরনের ছিল।

নগরবাসীর প্রতিক্রিয়া

সিলেট নগরীর বাসিন্দারা জানান, কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঘরের চেয়ার, দরজা ও মেঝে কম্পিত হতে দেখা গেছে। অনেকেই প্রথমে আতঙ্কিত হয়ে বাইরে বের হয়েছেন।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “হঠাৎ বাড়ি কম্পন শুরু করলে আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে। তবে কয়েক সেকেন্ড পরেই সবাই বাইরে বের হয়ে গেলাম। সৌভাগ্যক্রমে কেউ আহত হয়নি।”

অফিসকর্মীদের মধ্যে অনেকে দ্রুত অফিস ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান।

ভূমিকম্প সচেতনতা ও নিরাপত্তা পরামর্শ

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের সতর্ক করে বলছেন, যদিও ৪ মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত হালকা, তবুও ভবন বা কাঠামোর দুর্বল অংশে ক্ষতি হতে পারে। তাই জরুরি সময়ে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে হবে:

  1. নিরাপদ স্থানে অবস্থান: স্থির, খোলা এলাকা বা শক্তিশালী কাঠামোর ভেতরে থাকা নিরাপদ।
  2. প্যানিক না করা: ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়। শান্ত থাকা জরুরি।
  3. উঁচু জায়গা এড়ানো: জানালা, গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে থাকা উচিত।
  4. পরবর্তী কম্পন জন্য প্রস্তুতি: ভূমিকম্পের পরে প্রায়ই ছোট কম্পন বা aftershock হতে পারে, তাই সতর্ক থাকা জরুরি।

বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর (DDM) নিয়মিত মানুষকে ভূমিকম্প সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং নির্দেশনা প্রদান করে।

ভূমিকম্পের কারণ

ভূমিকম্প সাধারণত ভূত্বকের ফাটল বা টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে ঘটে। সিলেট অঞ্চলের ভূ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে, এটি প্রধানত হিমালয়ের টেকটোনিক প্লেট এবং মায়ানমার প্লেটের প্রভাবে ক্ষুদ্র কম্পনের শিকার হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেট অঞ্চলে স্থায়ীভাবে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা বিবেচনা করা উচিত। সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত চেকিং এবং দুর্বল কাঠামোর উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।

ভবিষ্যতের ঝুঁকি

যদিও ৪ মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত ক্ষতি করে না, তবে ভূ-তাত্ত্বিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেন, বড় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং নাগরিকদের নিয়মিত ভূমিকম্প সচেতনতা ও নিরাপত্তা অনুশীলন করা উচিত।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, ভবিষ্যতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে, যা স্থানীয় প্রশাসন এবং নাগরিকদের জন্য প্রস্তুতি অপরিহার্য করে তোলে।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করেছে। পুলিশ ও রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত অবস্থানে রয়েছে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনও নগরবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং জরুরি সেবা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।


সিলেট ও সুনামগঞ্জের ভূ-তাত্ত্বিক সংবেদনশীলতার কারণে এই ধরনের হালকা ভূমিকম্প সময়ে সময়ে ঘটতে পারে। যদিও রিখটার স্কেলে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণভাবে ক্ষতি করে না, নাগরিকদের সচেতন থাকা এবং নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এই ঘটনার মাধ্যমে ভূমিকম্প সচেতনতা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। নাগরিকরা আতঙ্কিত হলেও নিরাপদ থাকার জন্য সরকারী নির্দেশনা অনুসরণ করা জরুরি।

MAH – 12922 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button