বিশ্ব

বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত না দিলে আফগানিস্তানকে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

Advertisement

আফগানিস্তানকে হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও কঠোর সুরে আফগানিস্তানের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যদি আফগানিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে বাগরাম বিমানঘাঁটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফেরত না দেয়, তবে দেশটিকে ‘খারাপ পরিণতি’র মুখোমুখি হতে হবে।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে এই সতর্কবার্তা দেন। ওই পোস্ট দ্রুতই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

ট্রাম্প লিখেছেন, “বাগরাম এয়ারবেস যারা তৈরি করেছে, আফগানিস্তান যদি সেই দেশের হাতে এটি না ফিরিয়ে দেয়, তাহলে খারাপ কিছু ঘটবে।”

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্ন

শনিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, তিনি কি মার্কিন সেনা পাঠিয়ে ঘাঁটিটি পুনরুদ্ধার করতে চান? তবে তিনি সরাসরি উত্তর দেননি। শুধু বলেছেন, “এটা নিয়ে এখন আমরা কথা বলব না। আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা ওই বিমান ঘাঁটি ফেরত চাই। খুব শিগগিরই ফেরত চাই। যদি ওরা সেটা না করে, আমি কী করব সেটা আপনারা সকলে দেখতে পাবেন।”

বাগরাম বিমানঘাঁটির ইতিহাস

আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশে অবস্থিত বাগরাম বিমানঘাঁটি শুধু একটি সামরিক স্থাপনা নয়, বরং এটি মার্কিন–আফগান যুদ্ধ ইতিহাসের অন্যতম প্রতীক।

  • ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানে প্রবেশ করে।
  • সেই সময় থেকে বাগরাম বিমানঘাঁটি হয়ে ওঠে মার্কিন সেনাদের প্রধান ঘাঁটি।
  • প্রায় দুই দশক ধরে এই ঘাঁটি থেকে আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক অভিযান চালানো হয়।
  • ঘাঁটিতে শুধু সামরিক স্থাপনা নয়, ছিল ফাস্টফুড রেস্টুরেন্ট, ছোট ছোট দোকানপাট এবং একটি বিশাল কারাগার
  • ২০২১ সালে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করলে তালেবান দ্রুতই ঘাঁটিটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

কেন বাগরাম এত গুরুত্বপূর্ণ?

বাগরাম বিমানঘাঁটির কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে এই ঘাঁটি অবস্থিত। এখান থেকে শুধু আফগানিস্তান নয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা সহজ।

বিশেষজ্ঞদের মতে—

  • এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ছিল আঞ্চলিক সামরিক প্রভাব বিস্তারের কেন্দ্রবিন্দু
  • চীন, রাশিয়া ও ইরানের ওপরও এখানে থেকে নজরদারি চালানো যেত।
  • সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে এটি ছিল অন্যতম কার্যকর ঘাঁটি।

তাই ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার পর বাগরাম ঘাঁটি ফেরত চাইছেন, সেটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির দৃষ্টিতে একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।

তালেবানের অবস্থান

২০২১ সালে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পর তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে এখনো লড়াই করছে। বাগরাম বিমানঘাঁটি বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রকে ফেরত দেওয়ার কোনো ইঙ্গিত এখনো দেয়নি। বরং তালেবান মনে করে, মার্কিন সেনা চলে যাওয়ার পর ঘাঁটিটি এখন আফগানিস্তানেরই সম্পদ।

তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ট্রাম্প প্রশাসন চাপ বাড়ায়, তাহলে আফগানিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যেতে পারে।

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির তাৎপর্য

ট্রাম্পের এই বক্তব্য শুধু আফগানিস্তানের জন্য হুঁশিয়ারি নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তি প্রদর্শনের বার্তা। ২০২১ সালের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এখনো তীব্র বিতর্ক রয়েছে। অনেক রিপাবলিকান মনে করেন, সেনা প্রত্যাহার ছিল একটি বড় ভুল, যা তালেবানকে শক্তিশালী করেছে।

ট্রাম্প হয়তো সেই ক্ষোভ থেকেই বাগরাম ঘাঁটি ফেরত আনার দাবি তুলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর সমর্থকদেরও আশ্বস্ত করছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র আবারও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবস্থান নিতে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের পোস্ট প্রকাশিত হওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে এটি বড় খবর হয়ে ওঠে।

  • রাশিয়া ও চীন ইতিমধ্যেই সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
  • দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও শঙ্কিত, কারণ আফগানিস্তানে অস্থিতিশীলতা পুরো অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • জাতিসংঘের কূটনীতিকরা মনে করছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে, তবে মানবিক পরিস্থিতিও খারাপ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র–আফগানিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

বর্তমানে আফগানিস্তান আন্তর্জাতিকভাবে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। পশ্চিমা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়ানো তালেবানের জন্য আরও বিপজ্জনক হতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা সময়ই বলে দেবে।

বাগরাম বিমানঘাঁটি শুধু একটি সামরিক ঘাঁটি নয়, বরং এটি আফগানিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই দশকের দীর্ঘ ইতিহাসের প্রতীক। ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। এখন বিশ্ব অপেক্ষা করছে—আফগানিস্তান কি মার্কিন চাপে ঘাঁটিটি ছেড়ে দেবে, নাকি তালেবান প্রতিরোধ করবে?

একটি বিষয় নিশ্চিত—আগামী দিনে বাগরাম বিমানঘাঁটিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় ধরনের আলোড়ন দেখা দিতে পারে।

MAH – 12918 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button