রাজনীতি

আব্রার ফাহাদের হত্যা : বিএনপি নেত্রীর মিথ্যাচারের প্রতিবাদ, জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান ছাত্রশিবিরের

Advertisement

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র শহীদ আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনায় বিএনপি নেত্রী নিলুফার চৌধুরী মনির মিথ্যাচারী বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এক যৌথ বিবৃতিতে নিন্দা প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি নেত্রী আবরার হত্যার দায় ছাত্রশিবিরের উপর চাপিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করেছেন।

তাদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “ছাত্রলীগ কর্তৃক দেশের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডকে বিএনপি নেত্রী ভুল তথ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্যের মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। এটি শুধু মিথ্যাচারই নয়, বরং দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা।”

ঘটনার বিস্তারিত

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর, বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। আদালতের রায়ে এটি প্রমাণিত।

শিবিরের বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি নেত্রী নিলুফার চৌধুরী মনির বক্তব্য শুধুমাত্র ছাত্রশিবিরের ভাবমূর্তির ক্ষতি করছে না, একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের দীর্ঘদিনের অমানবিক কার্যকলাপের দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে।

রাজনৈতিক ও আদর্শিক প্রেক্ষাপট

বিবৃতিতে ছাত্রশিবির নেতারা উল্লেখ করেছেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নির্যাতন, বিরোধী মত দমন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অসংখ্য অপরাধ করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড বরাবরই নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

শিবিরের ১৬ বছরের ইতিহাসে ১০১ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন, ২০ হাজারেরও বেশি মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তারের মাধ্যমে অসংখ্য নেতাকর্মী চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। এখনও সাতজন শিবির সদস্য নিখোঁজ। বিএনপি নেত্রী এই বাস্তবতা উপেক্ষা করে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যাচার করছেন।

ছাত্রশিবিরের প্রতিক্রিয়া

শিবির নেতারা বলেন, “নিলুফার চৌধুরী মনি পরিকল্পিতভাবে ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন। আমরা এই বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। অবিলম্বে তিনি এই অসত্য বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় আমরা প্রয়োজনীয় আইনবিধি গ্রহণের পথে বাধ্য হব।”

শিবিরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, যারা ফ্যাসিস্ট রাজনীতি চালিয়ে ছাত্রশিবির ও বিরোধী মতের মানুষের উপর অত্যাচার চালায়, তাদের সকল কার্যকলাপের তথ্য দেশের জনগণের সামনে প্রকাশ করা হবে।

শিক্ষার্থী ও সমাজে প্রভাব

আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছে। বিএনপি নেত্রীর মন্তব্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্যই করা হয়েছে বলে শিবিরের বক্তব্য।

শিবির মনে করিয়ে দিয়েছে, শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু ও নিরাপদ শিক্ষাব্যবস্থা ও ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখতে প্রত্যেকটির সচেতনতা অপরিহার্য। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের তীব্র প্রতিবাদ স্পষ্ট করে যে, আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের দায় ছাত্রশিবিরের উপর চাপিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা মেনে নেওয়া যায় না। শিবিরের আহ্বান, বিএনপি নেত্রী জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং মিথ্যাচার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। দেশবাসী এই ঘটনায় সতর্ক, কারণ সত্য প্রকাশ এবং ন্যায়ের জয়ই শিক্ষার্থীদের ও সমাজের জন্য অপরিহার্য।

এম আর এম – ১৪২৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button