বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়নি আরব আমিরাত, ভিসা প্রসেসিং ওয়েবসাইট থেকে ছড়ানো হয়েছে ভুয়া তথ্য

Advertisement

বাংলাদেশিদের ওপর কোনো ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। সাম্প্রতিক সময়ে একটি ভিসা প্রসেসিং ওয়েবসাইট থেকে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব তৈরি হয়েছে। দুবাইস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, এ ধরনের কোনো ঘোষণা আমিরাত সরকার দেয়নি এবং জনগণকে এসব গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ঘটনা ও সরকারি অবস্থান

১৭ সেপ্টেম্বর একটি ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়, বাংলাদেশসহ নয়টি দেশের শ্রমিক ও ভ্রমণ ভিসা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। খবরটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও স্থান পায়।

কিন্তু দুবাইস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ স্পষ্ট করে জানান, ওয়েবসাইটটি কোনোভাবেই সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ভিসা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “আমিরাত সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়া এ ধরনের খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।”

গুজবের সূত্র ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ইউএই ভিসা অনলাইন’ নামে একটি ওয়েবসাইট থেকেই মূলত ভুয়া সংবাদটি ছড়ানো হয়। ওই ওয়েবসাইটে বাংলাদেশসহ নয়টি দেশের নাম উল্লেখ করে দাবি করা হয়, নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ রয়েছে।

সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ার পর প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে আতঙ্কে পড়ে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ভিসা প্রসেসিং অফিসগুলোতেও বাড়তি চাপ তৈরি হয়।

বাংলাদেশি শ্রমবাজার ও আমিরাত

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর লাখো শ্রমিক কাজের উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যায়। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত অন্যতম প্রধান গন্তব্য। প্রবাসী আয় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস হওয়ায় ভিসা সংক্রান্ত যেকোনো খবর সরাসরি অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলে।

২০১২ সালে একবার শ্রম ভিসা ইস্যু নিয়ে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল আমিরাত। তবে পরবর্তীতে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে তা শিথিল করা হয়। সেই অভিজ্ঞতার কারণে অনেকেই এবার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন।

বাংলাদেশ দূতাবাসের পদক্ষেপ

দূতাবাস জানায়, ভিসা ইস্যু নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র আমিরাত সরকারই জানাবে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে যোগাযোগ করেছে। দুবাইস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আরও জানায়, সাপ্তাহিক ছুটি শেষে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমিরাত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দূতাবাস বলেছে, “কোনো গুজবে কান দেবেন না, ভিসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত কেবল সরকারি ওয়েবসাইট বা অফিসিয়াল বিবৃতির মাধ্যমেই জানানো হবে।”

ভুয়া তথ্যের প্রভাব

এই গুজব শুধু প্রবাসীদের আতঙ্কিত করেনি, বরং বাংলাদেশে ভিসা প্রসেসিংয়ে জড়িত বিভিন্ন এজেন্সির মধ্যেও বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। অনেকেই ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ভুয়া তথ্য বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই সরকারি ও কূটনৈতিক চ্যানেল ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত খবর বিশ্বাস না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডিজিটাল যুগে ভুয়া তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়া একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশি প্রবাসীদের আয়ের ওপর দেশের অর্থনীতি নির্ভরশীল হওয়ায় এই ধরনের গুজব বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

ঢাকার একজন অর্থনীতিবিদের মতে, “বাংলাদেশি শ্রমবাজার নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেকোনো গুজব অর্থনৈতিকভাবে বড় চাপ তৈরি করতে পারে। তাই সরকারকে আরও শক্তিশালী তথ্য যাচাই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।”

সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের ওপর কোনো ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। একটি ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে গুজব ছড়ানো হলেও সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। এখন জরুরি হলো জনগণকে সচেতন রাখা এবং কেবল সরকারি ঘোষণাকেই সত্য তথ্য হিসেবে গ্রহণ করা।

প্রশ্ন থেকে যায়—ডিজিটাল যুগে ভুয়া তথ্যের এ প্রবাহ কীভাবে রোধ করা সম্ভব হবে?

এম আর এম – ১৪২৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button