
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নিয়ে চলমান অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের সমালোচনা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপি কখনোই “উড়ে এসে জুড়ে বসা দল” নয়, বরং দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম, ত্যাগ ও আত্মত্যাগের ফসল। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ফখরুলের বক্তব্যের মূল বিষয়
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র বহুবার হয়েছে, নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়েছে, কিন্তু কখনোই সফল হয়নি। তিনি বিএনপিকে ফিনিক্স পাখির সঙ্গে তুলনা করে বলেন, বারবার আঘাত এলেও বিএনপি নতুন শক্তি নিয়ে জেগে ওঠে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি হলো জনগণের দল। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। একদলীয় শাসনের অবসান ঘটাতে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, আর সেই ধারাবাহিকতায় আজও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি
মির্জা ফখরুল স্মরণ করিয়ে দেন, স্বাধীনতার পর দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেননি, বরং যুদ্ধোত্তর সময়ে নতুন রাজনৈতিক দিশা দেখিয়েছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে বিএনপি গড়ে ওঠে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে।
তিনি বলেন, “আমরা কোনোদিন উড়ে এসে বসিনি। লড়াই করেছি, রক্ত দিয়েছি, ত্যাগ স্বীকার করেছি। আজ যারা বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যা প্রচার করে, তারা ইতিহাস ভুলে গেছে।”
বর্তমান পরিস্থিতি ও অভিযোগ
সম্মেলনে ফখরুল অভিযোগ করেন, বর্তমানে বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারি পর্যায় থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে এবং জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তার দাবি, এই প্রচেষ্টা কোনো দিন সফল হবে না, কারণ বিএনপি জনগণের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি শক্তি।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। একদলীয় শাসন, গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার রাজনীতি আর জনগণ মেনে নিতে রাজি নয়। তাই বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সর্বদা প্রস্তুত।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বার্তা
মির্জা ফখরুল দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো ব্যক্তিগত নামে স্লোগান নয়, বরং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিতে হবে। বিএনপির ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং নেতৃত্বকে সামনে রেখে দলের ভবিষ্যৎ পথচলা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও যোগ করেন, বিএনপি সবসময় সম্প্রীতি ও ঐক্যের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। দেশের মানুষের মধ্যে বিভেদ নয়, বরং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে অগ্রসর হওয়াই দলের মূল লক্ষ্য।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলনে জানানো হয়, জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভা মিলে মোট ২১টি ইউনিট থেকে ২ হাজারেরও বেশি কাউন্সিলর দ্বিতীয় অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন। এই বিশাল উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, বিএনপি এখনও একটি বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি, যাদের ভিত্তি তৃণমূল পর্যায়ে সুসংহত।
বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি বারবার দমন-নীতি ও ষড়যন্ত্রের শিকার হলেও তাদের সংগঠনগত শক্তি কমেনি, বরং গণমানুষের মধ্যে নতুনভাবে জায়গা করে নিয়েছে।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফখরুলের এই বক্তব্য মূলত দলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার কৌশল। সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে হলে তৃণমূল পর্যায়ের ঐক্য জরুরি। তার বক্তৃতায় সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ থাকলেও মূল ফোকাস ছিল বিএনপির সংগ্রামী ঐতিহ্য ও ভবিষ্যতের প্রস্তুতি তুলে ধরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বিএনপি নিজেদের সংগঠন আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং গণআন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারে, তবে আসন্ন রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
পরিশেষে
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে—বিএনপি কোনো কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি হওয়া দল নয়, বরং সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক শক্তি। যদিও দলটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও অপপ্রচার চলছেই, তবে বিএনপি এখনও জনগণের পাশে আছে বলে দাবি করছেন নেতারা। প্রশ্ন থেকে যায়—এই ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ইতিহাসকে কতটা কাজে লাগিয়ে তারা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।
এম আর এম – ১৪২০,Signalbd.com