
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন থেকে কোনো নাগরিক এনআইডি সংশোধনের জন্য আবেদন করলে তা সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসির মাসিক সমন্বয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং এনআইডি অনুবিভাগের সব কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা জানানো হয়েছে।
সিদ্ধান্তের বিস্তারিত
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতদিন অনেক জটিল আবেদন দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকত। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়তেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যত জটিলই হোক না কেন, ৪৫ দিনের মধ্যে সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে। এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (পরিচালনা) মো. সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আমরা ফরম-২-কে আদর্শ হিসেবে ধরেছি। দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
বাংলাদেশে এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত সমস্যা বহুদিন ধরে আলোচনায় আছে। জন্মতারিখ, নামের বানান, ঠিকানা বা পারিবারিক তথ্য ভুল থাকলে নাগরিকদের নানা জটিলতায় পড়তে হয়। আগে এসব সংশোধন প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েক মাস থেকে কখনও এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেত। বিশেষ করে চাকরি, ভিসা বা ব্যাংকিং সেবার জন্য অনেকেই তাড়াহুড়ো করে সংশোধন চান, কিন্তু দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
ইসি জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৫৭ লাখেরও বেশি সংশোধনের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় সবগুলো নিষ্পত্তি হলেও বর্তমানে প্রায় ৮৭ হাজার আবেদন এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নাগরিকদের জন্য ইতিবাচক প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বস্তি পাবেন। দীর্ঘসূত্রিতা কমায় চাকরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে এনআইডি-সংক্রান্ত জটিলতা হ্রাস পাবে। অনেকে যেসব সমস্যার কারণে বারবার অফিসে যেতে বাধ্য হতেন, তা আর হবে না।
এছাড়া, ইসির এই উদ্যোগকে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের ওপরও একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার চাপ থাকবে, ফলে তারা আরও দায়িত্বশীলভাবে কাজ করবেন।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
ইসির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর কয়েক লাখ নাগরিক এনআইডি সংশোধনের আবেদন করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল ধরা পড়ে জন্মতারিখ ও নামের বানানে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি ১০০ জন আবেদনকারীর মধ্যে গড়ে ৪৫ জন জন্মতারিখ পরিবর্তনের আবেদন করেন, আর ৩০ জন নাম বা ঠিকানা সংশোধনের জন্য আবেদন করেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি এই সময়সীমা যথাযথভাবে মানা হয়, তবে আবেদন নিষ্পত্তির গড় সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। আগে যেখানে গড় সময় ছিল প্রায় ৯০ দিন, তা এখন অর্ধেকে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের মতামত
প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসির এই পদক্ষেপ একটি ইতিবাচক সংস্কার। সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া জরুরি। নাগরিক অধিকারকর্মীরাও মনে করেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যদি যথাযথ মনিটরিং হয়, তবে সাধারণ মানুষ প্রকৃত উপকার পাবেন।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছেন, শুধু সময়সীমা নির্ধারণ করাই যথেষ্ট নয়। আবেদন নিষ্পত্তির গুণগত মানও নিশ্চিত করতে হবে। যদি দ্রুততার কারণে ভুল সিদ্ধান্ত হয়, তবে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইসি জানিয়েছে, আবেদন নিষ্পত্তির সময়সীমা মেনে চলার জন্য আলাদা মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। এ ছাড়া ডিজিটাল সিস্টেম আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অনলাইনে আবেদন ও ট্র্যাকিং সিস্টেম আরও সহজ ও ব্যবহারবান্ধব করার পরিকল্পনাও আছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যদি পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটালাইজড করা যায়, তবে শুধু সময়সীমা নয়, বরং সেবার মানও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তির সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্ধারণ সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। ইসির নতুন সিদ্ধান্ত সেই দাবিকে পূরণ করেছে। এখন প্রশ্ন হলো—এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে? যদি কর্মকর্তারা সময়সীমা মেনে কাজ করেন এবং নাগরিকদের হয়রানি বন্ধ হয়, তবে এটি হবে প্রশাসনিক সেবায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এম আর এম – ১৪১৯,Signalbd.com