বাংলাদেশ

সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: এআই ইন জার্নালিজম প্রশিক্ষণ ঢাকায়

Advertisement

ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ – রাজধানীর গুলশানে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো এক বিশেষ কর্মশালা, যেখানে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকরা সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি) এবং বাংলাদেশ আইসিটি অ্যান্ড ইনোভেশন নেটওয়ার্ক (বিন) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালার শিরোনাম ছিল ‘এআই ইন জার্নালিজম’

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ, তথ্য যাচাই, কনটেন্ট তৈরি, এবং মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বশেষ কৌশল শিখেছেন। প্রশিক্ষণটি হাতে-কলমে অনুষ্ঠিত হওয়ায় অংশগ্রহণকারীরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক দক্ষতাও অর্জন করেছেন।

প্রশিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গি

কর্মশালার প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন ঢাকা পোস্টের হেড অব নিউ মিডিয়া ইনিশিয়েটিভ, আরিফুল ইসলাম আরমান। তিনি অংশগ্রহণকারীদের বলেন, “আজকের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কেবল সরল খবর লেখা বা প্রচলিত রিপোর্টিং যথেষ্ট নয়। দ্রুত তথ্য সংগ্রহ, যাচাই এবং বিশ্লেষণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অপরিহার্য। এআই-এর সঠিক ব্যবহার সাংবাদিকদের কাজকে আরও দ্রুত, নির্ভুল এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।”

প্রশিক্ষণে সাংবাদিকরা এআই-ভিত্তিক টুলস, অটোমেশন প্রযুক্তি, এবং মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট তৈরি করার নতুন উপায় শিখেছেন। বিশেষ করে, নিউজ রিপোর্টিং, ভিডিও সম্পাদনা, ইনফোগ্রাফিক তৈরি, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালিটিক্সসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার শেখানো হয়েছে।

টিএমজিবির বক্তব্য

টিএমজিবি’র সভাপতি মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন,
“সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রযুক্তি এবং এআই ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেশনা আরও আকর্ষণীয় ও কার্যকর করা সম্ভব। বিনকে এই উদ্যোগের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।”

তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের প্রশিক্ষণ সাংবাদিকদের কেবল তাদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ায় না, বরং সাংবাদিকতার মান উন্নয়নেও সহায়ক। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি সাংবাদিককে প্রযুক্তি-সচেতন এবং এআই ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা।”

বিনের দৃষ্টিভঙ্গি

বাংলাদেশ আইসিটি অ্যান্ড ইনোভেশন নেটওয়ার্ক (বিন) ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং বেসিসের সাবেক সভাপতি, সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন,
“বর্তমান সময় তথ্যপ্রযুক্তির সময়। শুধুমাত্র একাডেমিক সনদ অর্জন করলেই একজন দক্ষ হয়ে ওঠে না। প্রযুক্তি-ভিত্তিক দক্ষতা অর্জনই এখন মূল চাবিকাঠি। সাংবাদিকদের কাজের গতি, নির্ভুলতা এবং বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য এআই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি আরও জানান, খুব শিগগিরই ‘বাংলাদেশ আইসিটি অ্যান্ড ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫’ আয়োজন করা হবে। এই অনুষ্ঠানে দেশের সেরা উদ্ভাবনগুলোকে উপস্থাপন করা হবে।

“এই অ্যাওয়ার্ডসের মাধ্যমে দেশীয় উদ্ভাবন, প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান এবং সৃজনশীল উদ্যোগগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা হবে। বিজয়ীরা শুধু জাতীয় সম্মানই অর্জন করবেন না, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্যও মনোনীত হবেন। এভাবে তারা বাংলাদেশকে বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিধিত্ব করবেন এবং দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবেন।”

এআই সাংবাদিকতার ভবিষ্যত

বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেই এআই-এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংবাদ সংগ্রহ, তথ্য যাচাই, কনটেন্ট তৈরি, তথ্য বিশ্লেষণ এবং পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এআই-এর প্রভাব চোখে পড়ার মতো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাংবাদিকদের দ্রুত তথ্য যাচাই, ডাটা বিশ্লেষণ, ফেক নিউজ চিহ্নিতকরণ, স্বয়ংক্রিয় সংবাদ তৈরি এবং পাঠক প্রবণতা বিশ্লেষণসহ অনেক ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।

বাংলাদেশেও অনেক সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই এআই ব্যবহার শুরু করেছে। আর এ ধরনের প্রশিক্ষণ সাংবাদিকদেরকে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ এবং দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করার সুযোগ করে দেয়।

প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের গুরুত্ব

সাংবাদিকদের এআই বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেবল প্রযুক্তিগত দিকেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি তাদের সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা, তথ্যের গুণগত মান এবং রিপোর্টিং প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করে।

সাংবাদিকরা শিখেছেন কিভাবে এআই টুলস ব্যবহার করে সংবাদ সম্পাদনা, ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট তৈরি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঠকের সাথে যুক্ত হওয়া যায়। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যখন সংবাদ দ্রুত, নির্ভুল এবং আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে হয়।

এছাড়াও, সাংবাদিকরা শিখেছেন কিভাবে ডাটা অ্যানালিটিক্স এবং এআই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে পাঠকের প্রবণতা বুঝতে এবং কনটেন্ট কাস্টমাইজ করতে হয়।

দেশের প্রযুক্তিনির্ভর সাংবাদিকতার জন্য নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো ধীরে ধীরে এআই প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। এটি কেবল সংবাদ পরিবেশনা নয়, সাংবাদিকদের দক্ষতা, নৈতিকতা এবং পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতেও সহায়ক।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এআই-ভিত্তিক সংবাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদমাধ্যমগুলো নিউজ রিপোর্টিংয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। যেমন, স্বয়ংক্রিয় নিউজ জেনারেশন, ফেক নিউজ চেকিং, ভিডিও এবং অডিও কনটেন্ট এডিটিং, এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালিটিক্স। বাংলাদেশও ধাপে ধাপে এই প্রযুক্তি গ্রহণ করছে।

সাংবাদিকতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এখন সময়োপযোগী এবং অপরিহার্য। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকরা এ ধরনের প্রশিক্ষণ থেকে উপকৃত হয়ে তাদের পেশাগত মান বৃদ্ধি করতে পারবে।

টিএমজিবি ও বিনের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালা প্রমাণ করেছে যে, প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ সাংবাদিকদের কাজকে আরও ফলপ্রসূ, সৃজনশীল এবং তথ্যনির্ভর করে। ভবিষ্যতে আরও প্রশিক্ষণ এবং এআই-ভিত্তিক সাংবাদিকতা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ আশা করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দেবে।

MAH – 12916 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button