আঞ্চলিক

কুমিল্লায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৪ মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ

কুমিল্লার হোমনা উপজেলার আসাদপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে চারটি মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, ধর্মীয় বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথিত কটূক্তির অভিযোগ ওঠার পর উত্তেজিত জনতা মাইকে ঘোষণা দিয়ে মাজারের সামনে জড়ো হয়। পরে তারা কফিল উদ্দিন শাহর মাজারসহ কালাই শাহ, হাওয়ালি শাহ ও আবদু শাহের মাজারে ভাঙচুর চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।

ঘটনার বিস্তারিত

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাতেই মহসিন নামে এক অভিযুক্তকে আটক করা হয়। যদিও শুক্রবার সকালে বিক্ষুব্ধরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে মাজারে লোকজন জড়ো করে। পুলিশের দ্রুত হস্তক্ষেপের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত মাজারগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রামজুড়ে ভীতির ছায়া নেমে এসেছে। জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামলাতে সক্ষম হয়।

হামলা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ প্রসঙ্গে কিছু যুবক মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামের বিভিন্ন মাজারে হামলার পরিকল্পনা করে। এ ধরনের ঘটনা ইতিপূর্বেও কম দেখা যায়নি, তবে এই হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড স্থানীয়দের মধ্যে বিশেষ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর হোমনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয়রা ভয় প্রকাশ করেছেন যে, এই ধরনের সহিংসতা ধর্মীয় সহমর্মিতা ও সামাজিক শান্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।

পুলিশ জানিয়েছে, হামলার সঙ্গে যুক্তদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে কাজ চলছে। পাশাপাশি মাজারগুলোতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ ও পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

প্রশাসনের পদক্ষেপ

হোমনা থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, “আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। হামলাকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চলছে। ভবিষ্যতে এমন ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেবে।”

স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বসতি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দও পরিস্থিতি শান্ত করতে কাজ করছেন। গ্রামের মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ধর্মীয় কটূক্তি ও সামাজিক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এমন হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে। তারা সতর্ক করেছেন যে, জনমত প্রভাবিত করে মাইকে ঘোষণা দেওয়া ও ভাঙচুরের মতো কর্মকাণ্ড সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে।

একজন বিশ্লেষক বলেন, “স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক সচেতনতা ও সমঝোতার বিকল্প নেই। পুলিশি হস্তক্ষেপ অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সমাজে শান্তি বজায় রাখতে শিক্ষা ও ধর্মীয় সংলাপ জরুরি।”

কুমিল্লার হোমনা উপজেলার চার মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। প্রশাসন এবং পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করলেও সামাজিক উত্তেজনা এখনও পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। পরিস্থিতি এখন কেবল প্রশাসনের সতর্ক নজরদারিতেই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এম আর এম – ১৪১০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button