ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

আগামী শনিবার থেকে ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অবস্থিত এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
প্রদর্শনীতে অংশ নেবে মোট ২৬টি স্টল, যেখানে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং হালকা প্রকৌশল খাতের বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শিত হবে। এছাড়া শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরও ১২টি স্টল থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হলো
আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রদর্শনীর বিস্তারিত তথ্য দেন বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম এবং জিয়া হায়দার।
চেম্বার সভাপতি বলেন, “বাংলাদেশের হালকা প্রকৌশল খাতে বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এই খাতে কাজ করছেন ১০ লাখ মানুষ। স্থানীয় বাজারের আকার ১২ বিলিয়ন ডলার হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেকও পূরণ করতে পারছেন না। বৈশ্বিক হালকা প্রকৌশল খাতের বাজার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার, যা আমাদের জন্য বিশাল সম্ভাবনার সূচনা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। তাই অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের নতুন খাতগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।”
কৃষি যন্ত্রপাতির গুরুত্ব এবং বাজার
আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে কৃষিজমি প্রতিবছর কমছে এবং কৃষকের বয়স বাড়ছে। তরুণরা খুব কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত এবং এই ছোট অংশ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য উৎপাদন করছে। তাই কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ানো এখন অপরিহার্য।”
তিনি আরও জানান, “বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতির বাজারের পরিধি ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকা। তবে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করতে পারছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগ থাকলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে কৃষকের শ্রম ব্যয় কমবে, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ হলো সঠিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং সহজে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সুযোগ নিশ্চিত করা।
প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য ও প্রভাব
এই প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য হলো:
- স্থানীয় উৎপাদকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা – দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য ও প্রযুক্তি তুলে ধরা।
- নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তন – কৃষি ও অটোমোবাইল খাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচয় করানো।
- বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করা – উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন।
- শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি করা – আমদানি নির্ভরতা কমানো এবং দেশীয় উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা।
প্রদর্শনীতে স্মল ও মিডিয়াম স্কেল উৎপাদক, নতুন স্টার্টআপ এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবকরা অংশ নেবেন। এতে ইলেকট্রিক ভেহিকল, হালকা যানবাহন, ট্রাক ও বাসের মডেল, ট্র্যাক্টর, রাইস প্ল্যান্টার, হ্যারভেস্টার, ডিজিটাল কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হবে।
হালকা প্রকৌশল খাতের সম্ভাবনা
বিসিআইয়ের সভাপতি জানান, হালকা প্রকৌশল খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান এই খাতে কাজ করছে। তবে উচ্চ প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক মানের পণ্যের অভাবে বাজারের পুরো অংশ দখল করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, “বিনিয়োগ বাড়ালে, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা হালকা প্রকৌশল খাতকে বৈশ্বিক মানে নিয়ে যেতে পারি। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দেশীয় উৎপাদন বাড়বে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।”
কৃষি যন্ত্রপাতি: চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
কৃষি যন্ত্রপাতি খাতে বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জগুলো হলো:
- উচ্চ আমদানি নির্ভরতা
- কর্মীদের দক্ষতার অভাব
- তরুণ শ্রমিকদের কৃষি কাজে অনীহা
- আধুনিক প্রযুক্তির স্বল্পতা
সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন:
- স্থানীয় প্রযুক্তি উন্নয়ন ও উদ্ভাবন – রোবটিক্স, স্বয়ংক্রিয় সেচ ও হালকা যন্ত্রপাতি।
- কৃষক প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি – নতুন যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি।
- সরকারি নীতি ও অনুদান – দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদনশীলতা ও বাজার সম্প্রসারণে সহায়তা।
- উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপদের উৎসাহিত করা – কৃষি প্রযুক্তি ও অটোমোবাইল খাতে নতুন পণ্য উদ্ভাবনের সুযোগ।
অংশগ্রহণকারীদের প্রফাইল
প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলো মূলত:
- অটোমোবাইল উৎপাদক ও বিক্রেতা
- কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক
- হালকা প্রকৌশল খাতের কোম্পানি
- স্টার্টআপ ও উদ্ভাবন কেন্দ্র
- বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক সংস্থা
এছাড়া প্রদর্শনীতে থাকবে সরাসরি ডেমো, পণ্য প্রদর্শন, প্রযুক্তি সেমিনার এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা।
প্রদর্শনীর সময়সূচি ও প্রবেশাধিকার
তারিখ: আগামী শনিবার থেকে দুই দিন
স্থান: এডিসন প্রাইম ভবন, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা
সময়: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত
প্রবেশাধিকার: সাধারণ দর্শক, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কৃষক এবং শিক্ষার্থী
প্রদর্শনীতে আগতরা সরাসরি পণ্য ও প্রযুক্তি দেখার পাশাপাশি, কোম্পানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পাবেন।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের প্রদর্শনী দেশের অর্থনীতি ও কৃষি খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচনা। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে:
- কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে
- শ্রম ব্যয় কমবে
- খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে
- হালকা প্রকৌশল খাতের বিকাশে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে
এছাড়া, দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা মনোভাবের উন্নয়ন ঘটবে, যা দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদর্শনী শুধু প্রযুক্তি প্রদর্শনের এক প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি দেশীয় উৎপাদন, নতুন বিনিয়োগ, কৃষি আধুনিকীকরণ এবং হালকা প্রকৌশল খাতের বিকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দেশীয় উৎপাদন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলবে এই আয়োজন।
MAH – 12889 I Signalbd.com