এবার জেন-জি’দের বিক্ষোভে উত্তাল এশিয়ার আরেক দেশ

আইনপ্রণেতাদের বিলাসবহুল গাড়ি কেনার পরিকল্পনার প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছে পূর্ব তিমুরে। উত্তাল বিক্ষোভের কারণে সরকার পরিকল্পনা বাতিল করেছে।
পূর্ব তিমুরে (Timor-Leste) সরকার সম্প্রতি এমপিদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনার ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন এবং সরকারি গাড়িতে আগুন ধরানোর মতো ঘটনা ঘটায়। সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হওয়ায় অবশেষে পরিকল্পনাটি বাতিল করা হয়।
বিক্ষোভের বিস্তারিত
বিবিসি, এপিআই সহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানী দিলির রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নেমে টায়ার জ্বালান এবং সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্থানীয় শিক্ষার্থী ও যুব নেতা সিজারিও সিজার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “জনগণ শিক্ষা, পানি, স্যানিটেশনসহ নানা সমস্যার মুখে আছে। অথচ এমপিরা নিজেদের স্বার্থে বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে চায়। এটি ন্যায্য নয়।”
শুরুতে বিক্ষোভটি এমপিদের গাড়ি কেনার পরিকল্পনার প্রতিবাদে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে পরে তা বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দাবিতে রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা সাবেক এমপিদের আজীবন পেনশন বাতিলের দাবিও তুলে ধরেছেন।
পূর্ব তিমুরে এমপিদের জন্য সরকারি গাড়ি কেনার পরিকল্পনা নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরে এমন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রতিবাদ হয়। ২০০৮ সালে এমপিদের জন্য ১০ লাখ ডলারের গাড়ি কেনার প্রস্তাবের সময় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দেশটির এমপিদের বার্ষিক বেতন প্রায় ৩৬ হাজার ইউএস ডলার, যা দেশের গড় আয়ের চেয়ে প্রায় ১২ গুণ বেশি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায়, দেশের যুবসমাজ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা সরকারের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিক্ষোভ সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দেশের তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় হচ্ছে। সরকারের পদক্ষেপগুলি তাদের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া উচিত।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব তিমুরের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ ৩৫ বছরের নিচে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে এই দেশকে তুলনামূলকভাবে গণতান্ত্রিক উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়।
সম্প্রতি নেপালেও জেন-জি’র তরুণ আন্দোলন সরকারের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। পূর্ব তিমুরে যুবকদের এই বিক্ষোভকে একই ধারার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্ব তিমুরে এই ধরনের যুবা-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ ভবিষ্যতে দেশের নীতিনির্ধারণে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াবে। এ ধরনের গণ আন্দোলন সরকারকে জনসাধারণের চাহিদা ও প্রতিক্রিয়ার প্রতি সচেতন করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের যুবসমাজ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে সক্ষম। এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন উদ্যম যোগ করবে।
পূর্ব তিমুরের বিক্ষোভ প্রমাণ করে যে, জেনারেশন জেডের তরুণ প্রজন্ম সক্রিয় ও সজাগ। তারা শুধুমাত্র নিজেদের অধিকারই নয়, দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারের উচিত জনগণের দাবি ও প্রতিক্রিয়ার প্রতি সদয় ও সতর্ক হওয়া।
এম আর এম – ১৩৯২,Signalbd.com