বাংলাদেশ

ভাঙ্গা থানায় ভাঙচুর: নিক্সন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলা

Advertisement

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য এবং যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজিবুর রহমান ওরফে নিক্সন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় আরও ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা অনেককেই আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনেও তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত

মঙ্গলবার দুপুরে ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজাদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় দ্বিতীয় আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন মিয়াকে। এ ছাড়া স্থানীয় আরও রাজনৈতিক কর্মী ও ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের নামও মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের গাড়ি, থানার অবকাঠামোসহ সরকারি সম্পদের প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় নির্বাচন কমিশনের একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত গেজেটে ফরিদপুর-৪ আসনের দুটি ইউনিয়ন—আলগী ও হামিরদী—ভেঙে নগরকান্দা-সালথা অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর-২ আসনে সংযুক্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয়রা ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। ইউএনওর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করা হলেও কয়েকদিন পর আবারও অবরোধ, মিছিল এবং বিক্ষোভের কর্মসূচি শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে রেললাইন অবরোধের ঘটনাও ঘটে, যার কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয় এবং যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

অবরোধ ও সহিংসতার বিস্তার

সাম্প্রতিক আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে ভাঙ্গা থানা, উপজেলা কমপ্লেক্স, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা ও সরকারি কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশের গাড়িসহ বিভিন্ন সরকারি সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অন্যদিকে, দ্রুত বিচার আইনে এর আগে আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম. ম. সিদ্দিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই মামলায় মোট ৯০ জনকে আসামি করা হয়েছিল।

মামলার আইনি অগ্রগতি

ভাঙ্গা থানায় দায়ের করা সর্বশেষ মামলায় নিক্সন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। রাজনৈতিক মহলে এই পদক্ষেপকে বড় ধরণের সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। মামলার অন্য আসামিদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে এবং যেকোনো সময় আরও গ্রেফতার হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, সরকারি সম্পদের ক্ষতি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে তারা।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

নিক্সন চৌধুরীর নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একাংশ মনে করছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এই মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে, এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সীমানা পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের আন্দোলন নতুন নয়। তবে এবার সহিংসতার মাত্রা বেশি হওয়ায় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।

পরিসংখ্যান ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব

পুলিশের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে থানার ভবন, আসবাবপত্র, গাড়ি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সরকারি অফিসে নথিপত্র পুড়ে যাওয়া ও ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পরিবর্তনের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে স্থানীয় জনগণের অসন্তোষকে যথাযথভাবে সমাধান না করায় এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতারও প্রয়োজন রয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংসতা এড়ানো যায়।

একজন স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেন, “এই মামলায় যাদের নাম এসেছে তারা সবাই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মামলা শুধু আইনের প্রয়োগ নয়, বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণকেও প্রভাবিত করবে।”

ভাঙ্গা থানায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় নিক্সন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করার পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই আলোচনার ঝড় তুলেছে। এ মামলার ভবিষ্যৎ আইনি অগ্রগতি এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কেবল ফরিদপুর নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশ্ন এখন একটাই—আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কঠোর পদক্ষেপ কি পরিস্থিতি শান্ত করবে, নাকি নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করবে?

এম আর এম – ১৩৮৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button