বানিজ্য

ওয়ালটনের মাদারবোর্ড এবার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাংলাদেশের প্রযুক্তি

বাংলাদেশে হাইটেক ইলেকট্রনিকস এবং প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করল দেশীয় প্রযুক্তি জায়ান্ট ওয়ালটন। দেশীয় ব্র্যান্ড প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে মাদারবোর্ড (PCB ও PCBA) রপ্তানি শুরু করেছে। এই মাদারবোর্ড ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক গানশট শনাক্তকরণ ও জরুরি উদ্ধারকাজ পরিচালন সিস্টেমের সিকিউরিটি ডিভাইসে, যা মানব জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ওয়ালটনের করপোরেট কার্যালয়ে গত সোমবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব, আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম, এমডি এস এম মঞ্জুরুল আলম, ওয়ালটন মাইক্রো-টেকের সিইও নিশাত তাসনিম, এবং এক্সেনটেকের এমডি ও সিইও আদিল হোসেন নোবেল। অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সেফপ্রো টেকনোলজিসের প্রেসিডেন্ট পল এল একার্ট

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি: ওয়ালটনের গৌরবময় মুহূর্ত

ওয়ালটনের রপ্তানি করা মাদারবোর্ডগুলো যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন প্রদেশের সেফপ্রো টেকনোলজিসের কাছে পাঠানো হচ্ছে। প্রাথমিক চালান হিসেবে ২,৫০০টির বেশি মাদারবোর্ড রপ্তানি করা হচ্ছে, যার মোট মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা। এই মাদারবোর্ডগুলো ব্যবহার করা হবে স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সুরক্ষা ডিভাইসে।

ওয়ালটনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই বিশ্বমানের মাদারবোর্ডগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, এবং জরুরি সেবা সংক্রান্ত স্থাপনাগুলোতে অবৈধ শুটিং সনাক্তকরণ, সতর্কবার্তা এবং দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালন করবে। ডিভাইসটি অডিও-ভিজ্যুয়াল সংকেতের মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম।

মেইড ইন বাংলাদেশ: বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের প্রযুক্তি

বর্তমানে ওয়ালটন বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত পণ্য রপ্তানি করছে। দেশীয় প্রযুক্তি ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ালটনের এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। বিশেষ করে, নিরাপত্তা এবং জরুরি উদ্ধার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের অবস্থান শক্ত হয়েছে।

ওয়ালটনের তৈরি PCB এবং PCBA দিয়ে নির্মিত এই ডিভাইসগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে দ্রুত শুটিং সনাক্তকরণ, সতর্কবার্তা প্রদর্শন, এবং উদ্ধারকাজ পরিচালনার ফিচার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ডিভাইসগুলো মানব জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার জন্য অপরিহার্য।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ও বক্তব্য

প্রধান অতিথি ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব এবং বিশেষ অতিথি আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী অনুষ্ঠান শুরুর প্রাক্কালে দেশের প্রযুক্তি খাতে ওয়ালটনের অবদানকে উচ্চ প্রশংসা করেছেন।

ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলম, এমডি এস এম মঞ্জুরুল আলম, ওয়ালটন মাইক্রো-টেকের সিইও নিশাত তাসনিম, এবং এক্সেনটেকের এমডি ও সিইও আদিল হোসেন নোবেল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তারা দেশের প্রযুক্তি খাতের দ্রুত অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করার লক্ষ্যে তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।

মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সেফপ্রো টেকনোলজিসের প্রেসিডেন্ট পল এল একার্ট অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে এই রপ্তানি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং ওয়ালটনের প্রযুক্তি ও পণ্যের আন্তর্জাতিক মানের প্রশংসা করেছেন।

ওয়ালটনের প্রযুক্তি: বাংলাদেশের উদ্ভাবন

ওয়ালটন দেশের ইলেকট্রনিকস ও প্রযুক্তি খাতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। তাদের তৈরি পণ্য যেমন টেলিভিশন, ফ্রিজ, এসি, স্মার্টফোন, এবং ল্যাপটপ, এখন আন্তর্জাতিক মানের সাথে তাল মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে।

মাদারবোর্ড রপ্তানি শুধু ব্যবসায়িক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি বাংলাদেশের উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার পরিচায়ক। বিশেষ করে, এটি বাংলাদেশের হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরছে।

ওয়ালটনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই মাদারবোর্ডগুলো নিরাপত্তা এবং জরুরি উদ্ধার কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে, যা মানুষকে সুরক্ষা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নিরাপত্তা ডিভাইসের বৈশিষ্ট্য

ওয়ালটনের রপ্তানি করা মাদারবোর্ড ব্যবহার করে নির্মিত ডিভাইসের কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:

  • অবৈধ শুটিং সনাক্তকরণ – ডিভাইসটি সঙ্গে সঙ্গে শুটিং সনাক্ত করবে।
  • সতর্কবার্তা প্রদর্শন – অডিও-ভিজ্যুয়াল সংকেতের মাধ্যমে লোকজনকে সতর্ক করবে।
  • দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম – স্থানীয় উদ্ধারকারী সংস্থাকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হবে।
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমে প্রয়োগযোগ্য – স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য জনসমাগমে কার্যকর।

এই বৈশিষ্ট্যগুলো মানব জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই এটির কার্যকারিতা স্বীকার করেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের উপস্থিতি

ওয়ালটনের এই উদ্যোগ শুধু দেশীয় বাজারের জন্য নয়, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বাজারে প্রমাণ করার একটি পদক্ষেপ। বর্তমানে দেশীয় প্রযুক্তি পণ্য বিভিন্ন দেশে সুনামের সঙ্গে রপ্তানি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়ালটনের এই ধরনের রপ্তানি উদ্যোগ:

  1. দেশীয় প্রযুক্তি শিল্পকে প্রাধান্য দেবে।
  2. বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের মান বৃদ্ধি করবে।
  3. নিরাপত্তা ও জরুরি উদ্ধার ডিভাইস খাতে নতুন উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত করবে।

ওয়ালটনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ওয়ালটন ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ডিভাইস তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। তাদের লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশি প্রযুক্তিকে দুনিয়ার সঙ্গে সমকক্ষ করা এবং দেশীয় উদ্ভাবনকে গ্লোবাল মার্কেটে প্রতিষ্ঠিত করা।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ওয়ালটনের তৈরি PCB ও PCBA এর আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করেছে এবং এটি সেফপ্রো টেকনোলজিসের সিকিউরিটি ডিভাইসের জন্য আদর্শ পছন্দ

ওয়ালটনের এই মাদারবোর্ড রপ্তানি উদ্যোগ বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এটি শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, মানব জীবন রক্ষায় প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পরিচিতি বৃদ্ধির প্রমাণ।

ওয়ালটনের এই অর্জন বাংলাদেশের উদ্ভাবন, দক্ষতা এবং প্রযুক্তি শক্তি আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরেছে। দেশীয় প্রযুক্তি শিল্পের জন্য এটি একটি গৌরবময় ও অনুপ্রেরণামূলক পদক্ষেপ।

MAH – 12868  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button