ফুটবল

এমবাপ্পের গোলে রিয়াল মাদ্রিদের ঐতিহাসিক ২০০তম চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়

Advertisement

১০ জনের দল নিয়েও লড়াই থামায়নি রিয়াল মাদ্রিদ। এমবাপ্পের জোড়া পেনাল্টি গোলে লস ব্লাঙ্কোসরা ছুঁলো ইউরোপীয় ফুটবলের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক।

ম্যাচের সারসংক্ষেপ

মঙ্গলবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে এক নাটকীয় লড়াইয়ে অলিম্পিক মার্শেইকে ২-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচে শুরুর দিকে পিছিয়ে পড়লেও ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের জোড়া পেনাল্টি গোলে জয় নিশ্চিত করে লস ব্লাঙ্কোসরা। এই জয়ের মাধ্যমে রিয়াল ইতিহাসের প্রথম ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ২০০তম জয়৭০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছে।

প্রথমার্ধের খেলা

খেলার শুরু থেকেই দুই দল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তবে ২২ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় মার্শেই। ইংলিশ ফরোয়ার্ড ম্যাসন গ্রিনউডের নিখুঁত পাস ধরে পেনাল্টি বক্স থেকে দুর্দান্ত শটে জাল খুঁজে পান টিম উইয়াহ।

গোল খেয়ে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিক রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ধারাবাহিক আক্রমণ চালাতে থাকেন রদ্রিগো ও এমবাপ্পে। ২৯ মিনিটে অবশেষে সমতায় ফেরে রিয়াল। ডি-বক্সে রদ্রিগোকে ফাউল করায় পেনাল্টি উপহার পায় মাদ্রিদ। সেখান থেকে নির্ভুল শটে গোল করেন এমবাপ্পে।

প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলেও মাঠে ছিল উত্তেজনা। দুই দলের সমর্থকরাও পুরো ম্যাচে গ্যালারি মাতিয়ে রাখেন।

দ্বিতীয়ার্ধের উত্তেজনা

বিরতির পর ম্যাচ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তবে ৭১ মিনিটে রিয়ালের জন্য তৈরি হয় বড় ধাক্কা। মার্শেইর গোলরক্ষক জেরোনিমো রুল্লির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ডিফেন্ডার দানি কার্ভাহাল।

একজন খেলোয়াড় কম নিয়েও আক্রমণ চালিয়ে যায় রিয়াল। ৭৮ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা ভিনিসিউস জুনিয়র বক্সে প্রবেশ করলে তাকে ফাউল করে বসেন মার্শেই ডিফেন্ডাররা। আবারও পেনাল্টি পায় রিয়াল। দ্বিতীয়বারের মতো সফল স্পটকিক নেন এমবাপ্পে, আর তাতেই জয় নিশ্চিত হয় স্প্যানিশ জায়ান্টদের।

এমবাপ্পের রেকর্ড – ৫০ গোলের মাইলফলক

এই ম্যাচে দুই গোল করে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের ৫০তম গোল পূর্ণ করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই এই কীর্তি গড়েছেন তিনি।

চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এর আগে মাত্র কিছু কিংবদন্তি ফুটবলারই এত দ্রুত ৫০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করতে পেরেছেন। এমবাপ্পে দেখালেন কেন তিনি বর্তমান সময়ের সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন।

রিয়াল মাদ্রিদের ২০০তম জয় ও ৭০০ গোলের ইতিহাস

১৯৯২–৯৩ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপ থেকে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ নামকরণ করার পর থেকে আজ পর্যন্ত ২০০ জয় ও ৭০০ গোল — এই দুটি মাইলফলক একমাত্র রিয়াল মাদ্রিদের দখলে।

লস ব্লাঙ্কোসরা সবসময়ই ইউরোপের শীর্ষ আসরে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই জয় আবারও প্রমাণ করল, ইউরোপীয় মঞ্চে তাদের রাজত্ব এখনো অটুট।

মার্শেইর লড়াই ও ব্যর্থতা

অলিম্পিক মার্শেই অবশ্য ম্যাচের শুরুতে আক্রমণাত্মক খেলেছিল। গ্রিনউড ও উইয়াহর সমন্বয়ে তারা রিয়ালের ডিফেন্সে চাপ তৈরি করেছিল। তবে সুযোগ নষ্ট, রক্ষণভাগে ভুল এবং রেফারির সিদ্ধান্ত তাদের হারিয়ে দিল।

নতুন প্রতিভা ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোর অভিষেক

এই ম্যাচ দিয়েই রিয়াল মাদ্রিদের আর্জেন্টাইন তরুণ মিডফিল্ডার ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনোর চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক হয়েছে। মাত্র ১৮ বছর ৩৩ দিন বয়সে খেলে তিনি হয়ে গেলেন রিয়ালের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়।

এর আগে এই রেকর্ড ছিল ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড এনদ্রিকের (১৮ বছর ৭৩ দিন) দখলে। নতুন প্রতিভার এই অভিষেক রিয়ালের ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।

বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ – এমবাপ্পে যুগের রিয়াল

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিয়াল মাদ্রিদ এখন এমবাপ্পেকে ঘিরে নতুন এক যুগ শুরু করেছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো চলে যাওয়ার পর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেটি ধীরে ধীরে পূরণ করছেন ফরাসি সুপারস্টার।

তার গতি, গোল করার ক্ষমতা এবং বড় ম্যাচে পারফরম্যান্স রিয়ালকে আবারও ইউরোপের শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে।

ভবিষ্যৎ ম্যাচে রিয়ালের চ্যালেঞ্জ

চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে রিয়ালের সামনে আরও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী অপেক্ষা করছে। মার্শেইর বিপক্ষে এই জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ালেও, ডিফেন্স ও শৃঙ্খলার ঘাটতি কাটাতে না পারলে আগামী ম্যাচগুলোতে সমস্যায় পড়তে পারে।

কার্ভাহালের লাল কার্ড দলের জন্য বড় ধাক্কা। কোচ আনচেলোত্তিকে এখন বিকল্প রক্ষণভাগ সাজাতে হবে।

একজন খেলোয়াড় কম নিয়েও লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নেওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ আবারও প্রমাণ করল, কেন তারা ইউরোপের সর্বকালের সেরা দল। এমবাপ্পের জোড়া গোল শুধু তিন পয়েন্টই এনে দেয়নি, বরং ক্লাবের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ও লিখেছে।

MAH – 12857  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button