বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল: দেড় হাজার টাকা থেকে এক লাফে দেড় লাখ টাকা

কুমিল্লা নগরীর একটি আবাসিক বাসায় আগস্ট মাসে মাত্র দেড় হাজার চারশ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসলেও, সেপ্টেম্বর মাসের বিলের পরিমাণ হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছে এক লাখ সত্তর হাজারের উপর। এই ঘটনায় পরিবারটি হতবাক হয়ে বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করেছেন।
ঘটনার বিস্তারিত
তানজিদা আক্তার রিয়ার বাসায় আগস্ট মাসে মাত্র ১,৪০০ টাকার বিদ্যুৎ বিল আসে। সেপ্টেম্বর মাসের একই মিটার থেকে এক লাখ ৬৭ হাজার ৬৮৪ টাকার বিল আসায় তারা অবাক হয়ে যান।
রিয়া এবং তার পরিবারের সদস্যরা শাসনগাছা বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ জানান। তবে কর্মকর্তারা শুরুতে বিষয়টি তদন্ত না করে একে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। পরে কুমিল্লা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি তদন্ত করেছেন। দেখা গেছে, পুরনো মিটারটি যাচাই-বাছাই করার সময় অন্য একজন গ্রাহকের বিল ভুলবশত রিয়ার নামে চলে গেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের দুই কক্ষের বাসা দীর্ঘ চার বছর ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের আবেদন করেছিল। চলতি বছরে বাসাটি পুনর্নির্মাণ করে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করলে বিদ্যুৎ অফিস কার্ড মিটারে পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়। তবে পরিবারটি এতে আপত্তি করেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, কিভাবে বিদ্যুৎ মিটারের তথ্যগত ভুল এক পরিবারের জন্য ভয়াবহ আর্থিক চাপে পরিণত হতে পারে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে সামাজিক ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সাধারণ গ্রাহকরা উদ্বিগ্ন যে, মিটার বা প্রশাসনিক ভুলের কারণে যে কোনো সময় তারা বিপুল অর্থের চাপের মুখে পড়তে পারেন।
বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভুলটি স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। তবে গ্রাহকরা দাবি করছেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
বাংলাদেশে বেশিরভাগ আবাসিক গ্রাহক মাসে কয়েকশ থেকে এক-দেড় হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল পেয়ে থাকেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, মাত্র এক মাসে বিল বৃদ্ধি প্রায় ১২০ গুণে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ও প্রাইভেট অফিস উভয় ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এমন মিটারের তথ্যগত ভুল সাধারণত খুবই বিরল, তবে এটি পুনরাবৃত্তি রোধে প্রযুক্তিগত সমাধান এবং নিয়মিত যাচাই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিদ্যুৎ মিটারের তথ্য সঠিক না থাকলে তা গ্রাহকের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। বর্তমান ক্ষেত্রে, মিটার যাচাই ও ভুল বিল সংশোধনের প্রক্রিয়াকে দ্রুত এবং স্বচ্ছ করতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়াতে এ ধরনের ঘটনা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার বার্তা দেয়। পাশাপাশি, প্রশাসন ও বিদ্যুৎ সংস্থা আরও প্রজ্ঞা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
কুমিল্লার এই ঘটনা দেখাচ্ছে, বিদ্যুৎ বিলের ভুল কেবল আর্থিক ক্ষতির কারণ নয়, বরং মানসিক চাপও সৃষ্টি করে। সরকার ও বিদ্যুৎ সংস্থার উচিত দ্রুত যাচাই-বাছাই এবং গ্রাহক সচেতনতার মাধ্যমে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষা এবং বিলিং প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হলে এ ধরনের সমস্যার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
এম আর এম – ১৩৭২,Signalbd.com