দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের বিলাসবহুল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই পরিচালিত একটি বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের মূল হোতাকে চিহ্নিত করেছে বিবিসির অনুসন্ধানী দল। প্রধান ব্যক্তির নাম চার্লস মোসিগা। তিনি বিভিন্ন ধরনের সেক্স পার্টি ও বিলাসবহুল অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য নারীদের সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন।
বিবিসি অনুসন্ধানের তথ্য অনুযায়ী, চক্রটি নারীকে বাধ্য করে ভয়াবহ ও অমানবিক কার্যকলাপে যুক্ত করে এবং গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বিকৃত যৌন কার্যক্রমে প্রেরণা দিত।
ঘটনার বিস্তারিত
বিবিসির অনুসন্ধানী দল ছদ্মবেশী প্রতিবেদক পাঠিয়ে মোসিগার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। মোসিগা জানায়, তিনি রাতপ্রতি একেকজন নারীর জন্য ন্যূনতম এক হাজার ডলার খরচ করতে প্রস্তুত থাকেন। তার চক্রে উগান্ডা, পশ্চিম আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা নারীও জড়িত ছিলেন।
চক্রের নারীরা প্রায়শই জানত না যে তাঁরা মূলত যৌন ব্যবসায় যুক্ত হতে চলেছেন। তারা ভেবেছিলেন যে হোটেল বা সুপার মার্কেটে সাধারণ চাকরির জন্য দুবাই এসেছেন। ‘মিয়া’ নামের এক নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, তিনি মোসিগার চাপের মুখে অমানবিক কার্যকলাপে জড়িত হয়েছেন।
মোসিগা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, তিনি শুধুমাত্র বাড়িওয়ালাদের মাধ্যমে নারীদের বাসা পেতে সহায়তা করেন। তবে চক্রের বাকি অংশে তিনি সরাসরি সক্রিয় ছিলেন এবং বহু গ্রাহকের সঙ্গে সংযোগ রাখতেন।
দুবাইতে বিলাসবহুল সেক্স পার্টি নিয়ে বহু বছর ধরেই নানা গুজব ও সংবাদ প্রচলিত ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়ে পড়লেও বাস্তবতা আরও ভয়াবহ। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নারীদের ভয়, ঋণ এবং মানসিক চাপ ব্যবহার করে শোষণ করত।
বিবিসির অনুসন্ধানে জানা যায়, চক্রের সঙ্গে জড়িত দুই নারী দুবাইয়ের সুউচ্চ ভবন থেকে পড়ে মারা যান। যদিও এটি আত্মহত্যা হিসেবে ধরা হয়েছিল, তবে পরিবারের মতে, যথাযথ তদন্ত হয়নি। মোনিক ও মিয়ার মতো নারী চক্রের ফাঁদে পড়ে ভীত ও শোষিত হন।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
চক্রটির প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক মহল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, নারী পাচার ও যৌন শোষণের ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইন প্রয়োগের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় পুলিশ বিবিসির অনুসন্ধান নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করেনি। তবে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের চক্র বন্ধ করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন। অনেক নারী এখনো চক্রের ফাঁদে আটকে থাকতে পারে।
পরিসংখ্যান ও তুলনা
বিবিসির অনুসন্ধান অনুযায়ী, মোসিগার ব্যবসায় অন্তত ২৫ জনের বেশি নারী যুক্ত ছিলেন। রাতভর প্রতিটি নারীর জন্য এক হাজার ডলার থেকে শুরু করে উচ্চ বিকৃত চাহিদা অনুযায়ী বেশি খরচ ধার্য হতো। চক্রের অপারেশনস ম্যানেজার ট্রয় জানিয়েছেন, নারীদের নিরাপত্তা এবং গ্রাহকের জন্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে মোসিগা নৈশক্লাবের নিরাপত্তাকর্মীদের অর্থ প্রদান করতেন।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোসিগা চক্রের দীর্ঘদিন চলার কারণ ছিল তার নামের আড়ালে থাকা এবং অন্যান্য পরিচয় ব্যবহার। অনলাইনে পেছনের ছবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ছদ্মনাম এবং ভিন্ন পরিচয়ের মাধ্যমে তিনি চক্র চালিয়েছেন।
এ ধরনের চক্র নারীদের মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বৈষম্য ও জাতিগত বিদ্বেষকে কেন্দ্র করে অপব্যবহার করে। প্রবাসী নারীদের নিরাপত্তা এবং সঠিক তথ্য না থাকার কারণে তারা সহজেই ফাঁদে পড়ে।
বিবিসির অনুসন্ধানে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দুবাইয়ের বিলাসবহুল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে নারী শোষণ ও বিকৃত যৌন ব্যবসা চালানো হতো। চক্রের প্রধান চার্লস মোসিগা অনলাইনে নানা ছদ্মনাম ব্যবহার করে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
মানবাধিকারকর্মীরা এখন নারীদের নিরাপদ পুনর্বাসন এবং চক্র বন্ধের ওপর জোর দিচ্ছেন। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—আইন প্রয়োগকারী কতটা কার্যকরভাবে এ ধরনের চক্র মোকাবিলা করতে পারবে।
এম আর এম – ১৩৭১,Signalbd.com