বিশ্ব

কাতারে আর হামলা করবে না ইসরায়েল: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কাতারে আর কোনো সামরিক হামলার নির্দেশ দেবেন না। এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এক সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কাতার বর্তমানে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী হামাস গোষ্ঠী এবং ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। খবরটি প্রথম প্রকাশ করেছে আনাদুলো এজেন্সি।

ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় ট্রাম্প বলেন, “কাতার আমাদের খুবই ঘনিষ্ঠ মিত্র। অনেকেই হয়তো জানে না, কিন্তু নেতানিয়াহু ভবিষ্যতে কাতারে হামলার কোনো নির্দেশ দেবেন না। এখন থেকে তিনি কাতারের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়িয়ে চলবেন।”

কাতারে হামলার পটভূমি

গত ৮ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি বিমান বাহিনী কাতারে অবস্থানরত হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে বিমান হামলা চালায়। হামলার মূল লক্ষ্য ছিল হামাসের নির্বাহী কমিটির প্রধান খলিল আল হায়া এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতা।

সেখানকার স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মাত্র ১৫ মিনিট স্থায়ী হওয়া ওই বিমান হামলায় দোহায় হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছয়জন নিহত হন। তবে বিস্ময়ের বিষয়, হামলার মূল লক্ষ্য খলিল আল হায়া এবং গোষ্ঠীর অন্যান্য উচ্চপদস্থ নেতা বেঁচে যান।

এই হামলা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা জানায়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস এবং কাতারের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া

হামলার কয়েক ঘণ্টা পর, ৯ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট জানিয়েছিলেন, কাতারকে হামলার আগে সতর্ক করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কাতারকে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে আগেই জানিয়েছিলেন। আমরা আশা করি, এই সতর্কবাণী ভবিষ্যতে এ ধরনের জটিল পরিস্থিতি এড়াতে সাহায্য করবে।”

এই ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউস আরও যুক্ত করেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি এবং কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাতার, যেটি দীর্ঘদিন ধরে এই সংঘাতের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে, তার সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় থাকবে।”

কাতারের ভূমিকার গুরুত্ব

কাতার মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত, বিশেষ করে গাজা উপত্যকার সংঘাত এবং হামাস-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে। কাতারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা ছাড়া গাজায় শান্তি প্রক্রিয়া অনেকটাই কঠিন হয়ে যায়।

গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতের ইতিহাসে কাতার বারবার মানবিক সহায়তা, পুনর্গঠন ও মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রদান করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কাতারের মধ্যস্থতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংলাপ সহজতর হয়েছে।

ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের সাম্প্রতিক ঘটনা

গাজায় সংঘাত দীর্ঘদিন ধরে চললেও গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। ইসরায়েলি সেনারা হামাসের বিভিন্ন হামলার পরিকল্পনা ও অস্ত্রাগারকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। হামাসও ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে রকেট হামলা চালায়।

বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বারবার সতর্ক করে এসেছে যে, সাধারণ মানুষের ওপর হামলা ও নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা ক্রমবর্ধমান। বিশেষত, গাজায় শিশু ও মহিলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলের কাতারে হামলার পরে বিভিন্ন দেশ নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো একযোগে দাবি করেছে যে, এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।

বিশ্বের অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কাতার ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি নতুন ধরণের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হতে পারে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন দিকনির্দেশনা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

কাতার-ইসরায়েল সম্পর্কের ভবিষ্যৎ

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর ইসরায়েল-কাতার সম্পর্ক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। কাতার, যা হামাসের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সমঝোতার ভূমিকা রেখেছে, ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়াতে সক্ষম হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, নেতানিয়াহুর এই প্রতিশ্রুতি মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদি কাতার ও ইসরায়েল সহযোগিতা বাড়ায়, তাহলে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন ত্বরান্বিত হবে।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং এখানে প্রতিটি দেশের পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের মন্তব্যের মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কাতারের ভূমিকাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরও গুরুত্ব দেবে। ইসরায়েলও এখন কাতারের সঙ্গে মিলেমিশে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী কয়েক মাসে কাতার-ইসরায়েল সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ করবে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে। এটি কেবল মধ্যপ্রাচ্যই নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।

MAH – 12843  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button