আঞ্চলিক

ভাঙ্গার সীমানা ইস্যুতে ইসিতে ডিসির চিঠি, ফ্যাসিস্ট ধরতে চান ডিআইজি

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন নিয়ে নতুন রাজনৈতিক টানাপোড়েন

ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নের নির্বাচনী সীমানা পরিবর্তন নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী, এই দুই ইউনিয়ন ফরিদপুর-৪ আসন থেকে সরিয়ে ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক নেতারা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন পুনরায় ভাঙ্গা-৪ আসনের অন্তর্ভুক্তি করা হোক।

নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশ ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

নির্বাচন কমিশন ৪ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পরিবর্তন করে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়। এই ঘোষণার পরপরই স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত তাদের ভোটাধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

স্থানীয়রা দ্রুত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচন কমিশনকে নোটিশ পাঠিয়ে গেজেট বাতিলের দাবি জানান। পাশাপাশি, বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধের মাধ্যমে বিক্ষোভ শুরু হয়। ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, যা দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে বড় ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

বিক্ষোভ ও প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া

বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে সরকারি অফিস ও থানাগুলোতে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি জানান, থানার কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে এবং টহল দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, যারা অবৈধ ও সহিংস আন্দোলনে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আন্দোলনকারীদের দাবি

হামিরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোকন মোল্লা ও অন্যান্য আন্দোলনকারীরা নিম্নলিখিত দাবি তুলেছেন:

  • আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন পুনরায় ভাঙ্গা-৪ আসনের অন্তর্ভুক্তি করা হোক।
  • আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক।
  • নতুন কোনো মামলা আর দেওয়া যাবে না।
  • রাতের বেলায় প্রশাসনের হয়রানি বন্ধ করা হোক।

প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও আইনি প্রক্রিয়া

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে সীমানা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন। প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে যে, পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে এবং জনগণের দাবি বিবেচনায় নেওয়া হবে। তবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়েছে যাতে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হয়।

আইনি দিক থেকে, সুপ্রিম কোর্টে রিট দায়েরের মাধ্যমে এই গেজেট বাতিলের চেষ্টা চলছে। আইনজীবীরা বলছেন, নির্বাচনী সীমানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জনমত ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের মতামত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

এই সীমানা পরিবর্তন ভোটারদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব ও ভোটব্যাঙ্কে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কৌশল পুনর্বিন্যাস করতে হবে, কারণ কোন আসনে কোন ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত থাকবে তা পরিবর্তিত হয়েছে।

এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদে এই ধরনের সীমানা পরিবর্তন দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন তুলতে পারে। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

নিরাপত্তা ও জনজীবনে প্রভাব

মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও প্রভাবিত হয়েছে। পুলিশের গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংকটাপন্ন।

নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সমাধানের পথ ও সুপারিশ

  • সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সংলাপ: আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
  • জনমত গ্রহণ: নির্বাচনী সীমানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের মতামত নেওয়া উচিত এবং তা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
  • আইনি প্রক্রিয়া: গেজেট বাতিলের জন্য আদালতে ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
  • নিরাপত্তা ব্যবস্থা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে এবং অযথা বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • স্বচ্ছতা ও তথ্য প্রকাশ: নির্বাচন কমিশনকে প্রাথমিক তালিকা, আপত্তি ও পরামর্শের বিশ্লেষণ স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।

ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নের নির্বাচনী সীমানা পরিবর্তন একটি সংবেদনশীল ও জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটার, রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাই এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট। শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্য সমাধানের মাধ্যমে জনগণের দাবি ও প্রশাসনিক যুক্তি মিলিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানো জরুরি।

নির্বাচনী সীমানা সংশোধন হলে তা অবশ্যই জনগণের স্বার্থ ও আইনানুগ প্রক্রিয়া মেনে হতে হবে, যাতে ভোটাররা প্রকৃত অর্থেই তাদের প্রতিনিধিত্ব পায়। ভাঙ্গার জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন যদি তাদের উদ্বেগ ও দাবি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন, তবে একটি নির্মল, ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

MAH – 12839  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button