বাংলাদেশ

অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবিকে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ

Advertisement

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দেশজুড়ে অবৈধ অস্ত্রের প্রবেশ রোধে সাধারণ মানুষকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি বিজিবির গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, কিছু অসাধুচক্র দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ শরীফুল ইসলাম সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জানান, সীমান্তে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ রোধে বিজিবি মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা তৎপরতা ও আভিযানিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে। এই কার্যক্রমের ফলে গত তিন মাসে বিপুল সংখ্যক অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।

জব্দ হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের পরিসংখ্যান:

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে জব্দ হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে:

  • ১৬টি দেশি-বিদেশি পিস্তল
  • ২টি রিভলভার
  • ২টি এসএমজি (Sub Machine Gun)
  • ৫টি রাইফেল
  • ১৬টি দেশীয় বন্দুক
  • ৩টি শর্টগান
  • ৩টি মর্টার শেল
  • ৮টি হ্যান্ড গ্রেনেড
  • ২৭টি অন্যান্য অস্ত্র
  • ২১টি ম্যাগাজিন
  • ১০০৩ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ

শরীফুল ইসলাম জানান, অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ রোধে বিজিবি সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে সতর্কতা বৃদ্ধি করেছে। এই প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিজিবি নাগরিকদের টোল ফ্রি ০১৭৬৯৬০০৫৫৫ নম্বরে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।

বিজিবির গোয়েন্দা তৎপরতার গুরুত্ব:

বিজিবির মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা তৎপরতা শুধু সীমান্তেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, বিজিবি বিভিন্ন অঞ্চলে গোপন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেগুলি যাচাই-বাছাই করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ব্যবহার করে।

গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিজিবি শুধুমাত্র অস্ত্র উদ্ধার করে না, একইসাথে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক চক্রের কার্যক্রমও শনাক্ত করে। এসব চক্র সাধারণত সীমান্ত পার করে দেশে ঢোকার সময় গোপন পদ্ধতিতে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক পদার্থ নিয়ে আসে।

নাগরিকদের সহযোগিতার গুরুত্ব:

বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ রোধে স্থানীয় জনগণের তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড দেখতে পান বা অজানা প্যাকেজ, ব্যাগ বা যানবাহন সীমান্ত এলাকায় সন্দেহজনকভাবে চলাচল করছে, তাহলে তা বিজিবিকে অবিলম্বে জানানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।

বিজিবি নিশ্চিত করেছে যে, যে কোনো তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে নাগরিকরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এছাড়া তথ্যদাতা সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা পাবেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

বিজিবির আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত পাহারাদারি, পাহাড়ি এলাকা ও নদীর তীরে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়মিত তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।

সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার:

বিজিবি বলেন, এসব অভিযান শুধুমাত্র অস্ত্র উদ্ধার নয়, অপরাধমূলক চক্র চিহ্নিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। সীমান্তে যেকোনো ধরনের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড দেখা মাত্র দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

নতুন প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ:

অবৈধ অস্ত্র প্রতিরোধে বিজিবি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সীমান্ত চেকপোস্টে আধুনিক এক্স-রে মেশিন, নাইট ভিশন ক্যামেরা ও ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া, বিজিবির সদস্যরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

দেশে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা:

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সামাজিক শান্তি নিশ্চিত করতে অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। দেশে অবৈধ অস্ত্রের প্রচলন সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং সাধারণ নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে।

নাগরিকদের করণীয়:

  • সীমান্ত এলাকায় সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড দেখলে বিজিবিকে অবিলম্বে জানাতে হবে।
  • অননুমোদিত বা অজানা ব্যক্তিদের মাধ্যমে অস্ত্র, গোলাবারুদ বা বিস্ফোরক পদার্থ নিয়ে যেকোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা সরাসরি বিজিবি টোল ফ্রি নম্বরে জানাতে হবে।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

বিজিবি আশ্বস্ত করেছে যে, সকল ধরনের তথ্য গোপন রাখা হবে এবং তথ্যদাতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

দেশে আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক শান্তি রক্ষার জন্য অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ রোধ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সীমান্তে বিজিবির তৎপরতা এবং সাধারণ নাগরিকদের সহযোগিতা এই প্রচেষ্টাকে আরও কার্যকর করে তুলতে পারে। বিজিবি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, দেশকে নিরাপদ রাখতে সবাই যেন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন।

বিজিবির এই উদ্যোগ শুধু সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না, পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অবৈধ অস্ত্র রোধে সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণ দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।

MAH – 12831  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button