বাংলাদেশ

ঢামেক হাসপাতালে একসঙ্গে জন্ম নেয়া ৬ শিশুর মধ্যে একজনের মৃত্যু

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে একসঙ্গে জন্ম নেয়া ছয় নবজাতকের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) মারা যায় এক ছেলে নবজাতক। তার বয়স ছিল মাত্র ২৭ সপ্তাহ।

ঘটনাটি কীভাবে ঘটল?

রোববার সকাল ৯টার দিকে ঢামেকের গাইনি বিভাগের লেবার ওয়ার্ডে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার মোকসেদা আক্তার প্রিয়া (২৩) একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা ৬টার দিকে এক ছেলে নবজাতক মারা যায়। বাকি পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে ঢামেকের এনআইসিইউতে এবং বাকি দুইজনকে বেসরকারি হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

চিকিৎসকদের বক্তব্য

ঢামেক গাইনি বিভাগের ইউনিট-১ এর সহকারী অধ্যাপক ডা. আবিদা সুলতানা জানান, শনিবার রাতে প্রিয়া হাসপাতালে ভর্তি হন। রোববার সকালে তিনি একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটি আসলে পূর্ণাঙ্গ ‘বেবি’ নয়, বরং ২৭ সপ্তাহের ইনএবিটেবল অ্যাবরশন। শিশুদের মধ্যে তিনজনের ওজন প্রায় ৯০০ গ্রাম এবং বাকি তিনজনের ৮০০ গ্রাম। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ভাগ্য সহায় থাকলে সবাই সুস্থভাবে বেঁচে থাকবে। টিকে থাকা অনেক সময় কঠিন।

নবজাতকদের অবস্থা

প্রাথমিক চিকিৎসা ও নিবিড় পরিচর্যার পর বাকি পাঁচ নবজাতকের মধ্যে তিনজনের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও বাকি দুজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাদের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী, তবে পরিস্থিতি এখনও জটিল।

চিকিৎসকরা কি বলছেন?

ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ইউনিট-১ এর সহকারী অধ্যাপক ডা. আবিদা সুলতানা বলেন, “এ ধরনের জন্ম অত্যন্ত বিরল। নবজাতকদের বয়স কম হওয়ায় তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের পরিস্থিতিতে পরিবার ও চিকিৎসকদের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

পরিবারের প্রতিক্রিয়া

মোকসেদা আক্তার প্রিয়ার স্বামী জানান, “আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। ছয়টি সন্তান একসঙ্গে জন্ম নেয়া আমাদের জন্য আশ্চর্যের বিষয়। তবে আমরা চিকিৎসকদের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই বাকি পাঁচটি সন্তান সুস্থভাবে বেঁচে থাকুক।”

চিকিৎসা খরচ ও সহায়তা

এ ধরনের জটিল চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। প্রিয়ার পরিবার জানিয়েছে, তারা সরকারি সহায়তা ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছেন। ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তাদের সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন ঘটনা বিরল

চিকিৎসাবিজ্ঞানে একসঙ্গে ছয়টি সন্তানের জন্ম অত্যন্ত বিরল ঘটনা। সাধারণত, একসঙ্গে তিনটি বা চারটি সন্তানের জন্ম হয়। তবে ছয়টি সন্তানের জন্মের ঘটনা বিশ্বে খুব কমই ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে নবজাতকদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে, তবে উন্নত চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কিছুটা বৃদ্ধি পায়।

ঢামেক হাসপাতালের ভূমিকা

ঢামেক হাসপাতাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালের গাইনি বিভাগে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা কাজ করেন। এমন একটি জটিল পরিস্থিতিতে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে নবজাতকদের চিকিৎসা করছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নবজাতকদের চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিদিন নবজাতকদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছেন। এছাড়া, পরিবারের সদস্যদের জন্য মানসিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি

এ ধরনের ঘটনা সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একসঙ্গে ছয়টি সন্তানের জন্মের ঘটনা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং তারা স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে আরও সচেতন হবে। এছাড়া, এই ধরনের ঘটনা স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করবে।

ঢামেক হাসপাতালে একসঙ্গে ছয়টি সন্তানের জন্ম এবং এর মধ্যে একজনের মৃত্যু একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তবে চিকিৎসকদের নিরলস প্রচেষ্টা ও পরিবারের সমর্থনে বাকি পাঁচটি নবজাতক সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে, উন্নত চিকিৎসা ও সচেতনতা মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। আমরা আশা করি, বাকি পাঁচটি নবজাতক সুস্থভাবে বেঁচে থাকবে এবং তাদের পরিবারকে এই দুঃখজনক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে।

MAH – 12822  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button