গাইবান্ধায় বাসের ধাক্কায় শ্রমিক নিহত, আহত ৩

গাইবান্ধায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা
গাইবান্ধার তুলসীঘাট এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় রিপন মিয়া (২০) নামে এক তরুণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন শ্রমিক। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার পলাশবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের তুলসীঘাট পল্লী বিদ্যুৎ সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রিপন মিয়ার বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে। তিনি জীবিকার তাগিদে স্থানীয়ভাবে দিনমজুরি করতেন। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য হওয়ায় তাঁর মৃত্যুর খবরে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
কীভাবে ঘটলো দুর্ঘটনা?
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতের অন্ধকারে মহাসড়কের পাশে দাঁড়ানো একটি ট্রাকে কয়েকজন শ্রমিক গাছের গুঁড়ি লোড করছিলেন। হঠাৎ নারায়ণগঞ্জগামী কাজী লাইন পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে এসে ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয়। সংঘর্ষ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, ঘটনাস্থলেই রিপন মারা যান এবং বাকি তিন শ্রমিক গুরুতর আহত হন।
আহতদের অবস্থা
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আহতদের উদ্ধার করে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত লেগেছে।
পুলিশের বক্তব্য
গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর ইসলাম তালুকদার জানান, “ঘটনার পরপরই ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
এলাকাবাসীর ক্ষোভ
স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে রাতের বেলা বাসচালকরা অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালান। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়। এলাকাবাসীর দাবি—পুলিশকে আরও কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে এবং সড়কে অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্র
বাংলাদেশে প্রতিদিনই নানা স্থানে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে প্রায় ৬,৫০০-এর বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন এবং আরও কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে—
- বেপরোয়া গতি
- চালকের অসতর্কতা
- সড়কের ভাঙাচোরা অবস্থা
- ট্রাফিক আইন অমান্য
- অতিরিক্ত যাত্রী বহন
সড়ক নিরাপত্তা ও সরকারের পদক্ষেপ
সরকার সম্প্রতি সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন, স্পিড গান ব্যবহার, সিসিটিভি নজরদারি বাড়ানো এবং চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে দুর্ঘটনা কমাতে এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে শুধু আইন প্রণয়ন নয়, তার যথাযথ বাস্তবায়নও জরুরি। চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক বিশ্রাম, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং দীর্ঘ রুটে ডাবল ড্রাইভারের ব্যবস্থা করা হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
নিহতের পরিবারের আহাজারি
রিপন মিয়ার পরিবারে এখন শোকের মাতম। তাঁর বাবা-মা জানান, রিপন ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তার মৃত্যুর ফলে পুরো পরিবার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে নিহত পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুর্ঘটনা কমাতে নিচের পদক্ষেপগুলো জরুরি:
- চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স যাচাই
- সড়কের পাশে আলোকসজ্জা বাড়ানো
- অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার
- দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো
- যাত্রী ও পথচারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি
গাইবান্ধার তুলসীঘাটে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো যে, বাংলাদেশের সড়ক এখনও কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিনই সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, আহত হচ্ছে অনেক শ্রমজীবী মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক, চালক, যাত্রী ও নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে “নিরাপদ সড়ক” এখনো কেবলই স্লোগান হয়েই থাকবে।
MAH – 12817 Signalbd.com