
ফরিদপুরের সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংঘর্ষ ও রাস্তা অবরোধের ঘটনায় কোনোরূপ ছাড় দেওয়া হবে না। এমন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, “রাস্তা অবরোধ করার অধিকার কারো নেই। যারা এটা করছে, তারা লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করে রাখছে। এই ধরনের কার্যকলাপ কোনোভাবে বরদাশতযোগ্য নয়। যদি তারা আজকের মধ্যে সমস্যার সমাধান না করে, আমরা আইন প্রয়োগ করতে বাধ্য হব।”
রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কোর কমিটির সভার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানান।
কোর কমিটির সভা: আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে বিশদ আলোচনা
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কোর কমিটির সভায় দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আলোচনার বিষয়বস্তুতে ছিল:
- সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচন ও তার পরবর্তী পরিস্থিতি
- পুলিশের প্রশিক্ষণ এবং আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি
- ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি এবং সীমান্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়
- পূজা উৎসবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
- ফরিদপুরের দুটি ইউনিয়ন সংক্রান্ত বিতর্ক
তিনি বলেন, “ফরিদপুরের এই দুই ইউনিয়নের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এই দুটি ইউনিয়ন পূর্বে যে সংসদীয় আসনে অন্তর্ভুক্ত ছিল, এখন অন্য আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই; এটি সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের বিষয়।”
ফরিদপুরের দুটি ইউনিয়ন এবং জনদূর্ভোগ
ফরিদপুরের দুই ইউনিয়নের সমস্যা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “যুক্তি-তর্কের সবকিছু বিবেচনার পর নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ক্ষোভ থাকলেও, সেটা যথাযথ চ্যানেলে জানানো উচিত ছিল। জনদূর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই দুটি ইউনিয়নে কতজন মানুষ ও ভোটার বসবাস করে? অথচ তারা লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করে রাখছে। এটি আমাদের সহ্য করা সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে আমরা বাধ্য হলে কঠোর পদক্ষেপ নেব।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের প্রস্তুতি
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সরকারের লক্ষ্য হলো দেশের জনগণকে নিরাপদ রাখতে এবং জনগণের চলাচল অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাহত না হতে দেওয়া। তিনি বলেন:
- রাস্তা অবরোধকারী আন্দোলনকারীদের জন্য কোনো ছাড় থাকবে না
- জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হলে আইন প্রয়োগ করা হবে
- পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী পুরো প্রস্তুত
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো মানুষকে নিরাপদ রাখতে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করা। রাস্তা বন্ধ করে বা অন্য কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণকে জিম্মি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকার দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।”
নির্বাচন ও ইউনিয়ন পুনঃবিন্যাস
ফরিদপুরের দুটি ইউনিয়ন পুনঃবিন্যাস প্রসঙ্গে উপদেষ্টা জানান, এটি সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। তবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, “যে কোনো সিদ্ধান্ত বা পরিবর্তন জনগণকে সঠিক মাধ্যমে জানানো উচিত। রাস্তা অবরোধের মাধ্যমে যে ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে, তা আইনসম্মত নয়।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সরকার সবসময় চেষ্টা করে থাকে যাতে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত না হয়। যারা অবরোধের মাধ্যমে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করছে, তারা আইনমাফিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না।”
দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি
কোর কমিটির সভায় দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল:
- সীমান্ত নিরাপত্তা: বাংলাদেশের সীমান্তে চুরি, ডাকাতি ও অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে রাখা
- ছিনতাই ও চুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা: দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
- পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ: নতুন আইন ও নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তুতি
- উৎসবকালীন নিরাপত্তা: পূজা এবং অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে জনসাধারণের সুরক্ষা
উপদেষ্টা বলেন, “দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান কর্তব্য। এর জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো হচ্ছে।”
জনদূর্ভোগ রোধের প্রয়োজনীয়তা
ফরিদপুরের রাস্তা অবরোধের ঘটনা দেশের অন্যান্য অংশেও প্রভাব ফেলেছে। সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারছে না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যাহত হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের নীতি স্পষ্ট:
- অবরোধকারীদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা
- যথাযথ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ
- জনগণকে সচেতন করা যাতে তারা আইনসম্মত পথে ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারে
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “লক্ষ্য হলো জনগণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা এবং কোনোভাবেই জনদূর্ভোগকে সহ্য করা হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সরকারের অঙ্গীকার।”
ফরিদপুরের সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা এবং রাস্তা অবরোধের ঘটনা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সরকারের লক্ষ্য হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনদূর্ভোগ কমানো এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সরকারের দৃঢ় অবস্থান হলো:
- কেউ রাস্তা অবরোধ করে জনগণকে জিম্মি করতে পারবে না
- সমস্যা সমাধানে যথাযথ আইন প্রয়োগ করা হবে
- জনগণকে সচেতন করা হবে যাতে তারা নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি প্রকাশ করতে পারে
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে সকলের প্রতি বার্তা হলো, শান্তিপূর্ণ ও আইনসম্মত পন্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করা উচিত। সরকারের কার্যক্রম ও কোর কমিটির সভার সিদ্ধান্ত দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
MAH – 12801 Signalbd.com