জাতীয়বাংলাদেশ

সারা দেশে ট্রেন বন্ধের শঙ্কা: রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি

সারা দেশে রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি তাদের কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার জটিলতা নিরসনে দীর্ঘদিনের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে তারা।

কেন এই সংকট?

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ (যারা ট্রেন পরিচালনায় সরাসরি যুক্ত, যেমন চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) দীর্ঘদিন ধরে মাইলেজ সুবিধার দাবি জানিয়ে আসছেন। ১৬০ বছরের ঐতিহ্যবাহী নিয়ম অনুযায়ী, রানিং স্টাফরা কাজের অতিরিক্ত সময়ের জন্য বিশেষ ভাতা পেতেন, যা পেনশনের অংশ হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ২০২১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় এই নিয়ম পরিবর্তন করে মাইলেজ সুবিধাকে সীমিত করে দেয়।

এতে রানিং স্টাফদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা দাবি করেন, ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বাড়তি মাইলেজ ভাতা পাওয়া তাদের অধিকার। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ২১ আগস্টের এক চিঠিতে জানায়, রানিং স্টাফরা শুধুমাত্র রানিং অ্যালাউন্স পাবেন, যা তাদের মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না।

রানিং স্টাফদের দাবি কী?

রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির দাবি:

  1. মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন নির্ধারণ।
  2. অতিরিক্ত কাজের জন্য মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল।
  3. আনুতোষিক ভাতা নিয়মিতকরণ।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, “১৬০ বছর ধরে চলমান নিয়ম হুট করে বন্ধ করে দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা অনেকবার আলোচনায় বসেছি, আন্দোলন স্থগিত করেছি। কিন্তু এবার আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

গত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত

২০২২ সালের ৪ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় চিঠি প্রত্যাহার করেছিল। তখন রেলমন্ত্রী সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও সেই প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

এবার রানিং স্টাফরা ২৮ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে তারা জানিয়েছে, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের দাবির বিষয়ে সুস্পষ্ট চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালু থাকবে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম জানান, “আমরা রানিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা যেন কর্মবিরতিতে না যান, সে চেষ্টা করছি।”

তবে রানিং স্টাফরা বলছেন, আলোচনায় বারবার সময় দেওয়া হলেও এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ট্রেন চলাচল বন্ধ হলে কী হবে?

রানিং স্টাফের মোট পদের মধ্যে বর্তমানে মাত্র অর্ধেক পূরণ রয়েছে। একজন কর্মচারীকে দুই জনের কাজ করতে হচ্ছে। যদি কর্মবিরতি শুরু হয়, তবে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। ট্রেনের শিডিউল ভেঙে যাবে, অনেক ট্রেনের যাত্রা বাতিল হবে। যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি চরমে উঠবে।

রানিং স্টাফদের দাবি পূরণে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দেশের রেল যোগাযোগে অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় রেলপথের এ সংকট আরও গভীর হতে পারে।

এই ধরনের আরও আপডেট পেতে Signalbd.com-এর সঙ্গে থাকুন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button