নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী, ১৯৭৩ সালে বিমান ছিনতাই করেছিলেন

নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো, যখন দেশটির প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সুশীলা কার্কি নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে সুশীলা কার্কির নাম সম্ভাব্য উত্তরসূরির তালিকায় উঠে আসে। তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি এবং বিচারিক দায়িত্বের সময় ন্যায়পরায়ণতা দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছিল।
নেপালের নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আগেই জানতেন যে, কার্কির নেতৃত্বের ধারা কঠোর এবং ন্যায়নিষ্ঠ হবে। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে একটি পুরনো ঘটনা।
সুশীলা কার্কি এবং তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা
সুশীলা কার্কি নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। বিচারিক ক্ষেত্রে তাঁর জিরো টলারেন্স নীতি এবং দুর্নীতি দমনমূলক কর্মকাণ্ড তাঁকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছিল। বিচারপতির দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন বিতর্কিত মামলায় ন্যায়বিচারের উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন।
কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর, নেপালের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং জনগণ একেবারে কার্কির দিকে নজর দেন। তাঁর নাম ওঠে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর তালিকায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কার্কির অভিজ্ঞতা, সৎ নেতৃত্ব এবং জনমত কৌশল তাঁকে এই দায়িত্বে উন্নীত করেছে।
ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্ক: বিমান ছিনতাই কাণ্ড
সুশীলা কার্কির স্বামী, দুর্গা প্রসাদ সুবেদী, নেপালের ইতিহাসে এক আলোচিত বিমান ছিনতাই ঘটনায় জড়িত ছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের ১০ জুন, রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিরাটনগর থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল।
বিমানের মধ্যবর্তী সময়ে দুর্গা প্রসাদ সুবেদী পাইলটকে পিস্তল দেখিয়ে বিমানের নিয়ন্ত্রণ ভারতীয় বিহারের দিকে নিতে বাধ্য করেন। ওই বিমানে যাত্রী হিসেবে ছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মালা সিনহাও। এই ছিনতাইয়ের সময় বিমান থেকে সরকারি ব্যাংকের প্রায় ৪০ লাখ রুপি ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
বিমান ছিনতাইয়ের পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল নেপালে রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনের জন্য অর্থ সংগ্রহ। তৎকালীন নেপালি কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা গিরিজা প্রসাদ কৈরালা এই পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। পরে গিরিজা প্রসাদ নেপালের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হন।
দুর্গা প্রসাদ এবং তাঁর সহযোগীরা পরে মুম্বাই থেকে গ্রেপ্তার হন। তবে ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর থেকে সুশীলা কার্কির রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়।
শিক্ষা ও পারিবারিক জীবন
ভারতের বেনারস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় সুশীলা কার্কি ও দুর্গা প্রসাদ সুবেদীর পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাদের ঘরে একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সুশীলা কার্কি তাঁর পরিবারের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল এবং রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি পারিবারিক দায়িত্ব পালন করেও প্রশংসিত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সুশীলা কার্কির প্রধানমন্ত্রী হওয়া আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং গণমাধ্যমের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাঁকে নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, যা নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে দেশটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কার্কির নেতৃত্ব দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিকনির্দেশনা আনতে পারে। তবে তার ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্ক এবং স্বামীর অতীত নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এবং নেপালি জনগণের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা চলছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুশীলা কার্কির সামনে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। দেশীয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দুর্নীতির দমন এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করা তার অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তাঁর বিচারিক অভিজ্ঞতা এবং কঠোর নীতি প্রয়োগ ক্ষমতা দেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্ক এবং অতীতের ঘটনাগুলি রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
সার্বিক মূল্যায়ন
সুশীলা কার্কির প্রধানমন্ত্রী হওয়া শুধুমাত্র নারীর ক্ষমতায়নকে উদযাপন করে না, বরং নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। তার নেতৃত্ব দেশকে স্থিতিশীল, ন্যায়নিষ্ঠ এবং প্রগতিশীল দিকনির্দেশনায় নিয়ে যেতে পারে।
নেপালের জনগণ আশা করছে, নতুন প্রধানমন্ত্রী দেশকে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নেপালের এই পরিবর্তনকে আগ্রহের সঙ্গে দেখছেন।
MAH – 12785, Signalbd.com