আরও ২ মাস বাড়লো সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা

সরকার বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তার উপরের সমপদমর্যাদার কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (কোস্টগার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তাসহ) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা আরও দুই মাস বাড়িয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানায়। নতুন প্রজ্ঞাপনের আওতায় ক্ষমতার মেয়াদ ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ৬০ দিনের জন্য বৃদ্ধি পাবে।
প্রজ্ঞাপনের বিস্তারিত
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারার অধীনে সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
এই ক্ষমতার আওতায় তারা প্রয়োজনে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জরুরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অপরাধ দমন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ৩০ সেপ্টেম্বর নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদেরও এই ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
তারপর থেকে সরকার ধাপে ধাপে প্রতিটি মেয়াদ ৬০ দিন করে বাড়িয়ে আসছে। এই সিদ্ধান্ত মূলত দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং জরুরি প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
প্রভাব ও প্রয়োগ ক্ষেত্র
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক ও ফৌজদারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।
বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা সীমান্তবর্তী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই ক্ষমতা কার্যকর হবে। এছাড়াও, জাতীয় বা স্থানীয় জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা কর্মকর্তাদের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে এই মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশাসনিক ও ফৌজদারি ক্ষমতার প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতা প্রয়োগের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা জরুরি অবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।
বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, “সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। এটি স্থানীয় প্রশাসনের উপর অতিরিক্ত চাপ কমাবে।”
অন্যদিকে, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. মাহফুজুর রহমান মন্তব্য করেন, “নিয়মিত মেয়াদ বৃদ্ধি দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হলেও, এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কখনও কখনও সমালোচনার কারণ হতে পারে। ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
সংক্ষিপ্তসার
সরকারের এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা আরও দুই মাসের জন্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত রাখতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ক্ষমতা বাস্তবায়নের প্রভাব কতটা কার্যকর হবে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও নাগরিকদের সঙ্গে সমন্বয় কতটা রাখা সম্ভব হবে।
এম আর এম – ১২৯৭,Signalbd.com