বিশ্ব

মারা যাননি নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, শারীরিক অবস্থা গুরুতর

নেপালে বিক্ষোভের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালনাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষী চিত্রকরের মৃত্যু হয়নি বলে বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম। তবে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তিনি এখনো সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

ঘটনাটির বিস্তারিত

নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই মঙ্গলবার খবর ছড়িয়ে পড়ে যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালনাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষী চিত্রকর আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরটি ব্যাপক প্রচার পায়।

তবে বৃহস্পতিবার সংশোধিত তথ্য দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম জানায়, তিনি মারা যাননি। বর্তমানে রাজ্যলক্ষী চিত্রকরের শরীরের অধিকাংশ অংশ পুড়ে গেছে এবং তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষাপট

দুই দিন আগে রাজধানী কাঠমান্ডুতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালনাথ খানালের বাড়িতে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ভেতরে আটকা পড়ে যান তার স্ত্রী রাজ্যলক্ষী চিত্রকর। আগুনের লেলিহান শিখায় তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে আগুন লাগার সময় ঘরে আটকা পড়ায় রাজ্যলক্ষীকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

নেপালে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভ রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেশটির রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ঝালনাথ খানাল নেপালের মাওবাদী নেতৃত্বাধীন সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নানা রাজনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম চালান। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনায় তার পরিবারের ওপর এমন আক্রমণ দেশটির জনগণকে স্তম্ভিত করেছে।

প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব

রাজ্যলক্ষী চিত্রকরের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় নেপালের বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিরোধী নেতারা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক মতবিরোধ কখনোই সহিংসতায় রূপ নেওয়া উচিত নয়।

অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খানালের সমর্থকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। নেপালের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

নেপালে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা নতুন নয়। ২০০৬ সালের গণআন্দোলন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় প্রতি বছরই ছোট-বড় সহিংসতা ঘটে থাকে। তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ওপর সরাসরি আক্রমণ সাম্প্রতিক কালে বিরল।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত পাঁচ বছরেই নেপালে রাজনৈতিক সহিংসতায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে এবার প্রাণহানির খবর না আসলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী গুরুতর আহত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা নেপালের চলমান রাজনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করবে। বিশ্লেষক অমৃত বাহাদুর থাপার মতে, “একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ওপর হামলা দেশটির জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এটি নেপালের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।”

অন্যদিকে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সরকারের উচিত দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা। না হলে সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

পরিশেষে

নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালনাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষী চিত্রকর গুরুতর আহত হলেও এখনো জীবিত আছেন—এ খবর কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উদ্বেগ কাটছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই ঘটনা দেশটিকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—নেপালের সরকার কি পরিস্থিতি শান্ত করতে পারবে, নাকি সহিংসতা আরও ভয়াবহ আকার নেবে?

এম আর এম – ১২৮৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button