বিশ্ব

৭২ ঘণ্টায় ছয় দেশে ইসরাইলের হামলা: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনা

গত ৭২ ঘণ্টায় ইসরাইলের বিমান হামলা ও সামরিক অভিযানের ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে ছয়টি দেশে — কাতার, ইয়েমেন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, লেবানন ও ফিলিস্তিন (গাজ্জা)। এই সময়কালের মধ্যে গড়েই আহত ও নিহতের সংখ্যা গলিয়ে ফেলেছে মানবিক সহনশীলতার সীমা। জনস্বার্থ, আন্তর্জাতিক আইন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রগুলো উদ্বিগ্ন।

প্রধান ঘটনা ও বিশ্লেষণ

নিচে দেশভেদে হামলার সময়, কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ করা হচ্ছে:

দেশহামলার তারিখ ও উদ্দেশ্যকবলিত এলাকা / লক্ষ্যনিহত ও আহতআন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব
কাতার৯ সেপ্টেম্বর, একটি আবাসিক কমপাউন্ডে হামলা — লক্ষ্য ছিল হামাস নেতাদের বৈঠকদোহা, ওয়েস্ট বে লাগুন এলাকা — স্কুল, আবাসিক ও কূটনৈতিক এলাকা যুক্তকমপক্ষে ৬ জন নিহত, আহত রয়েছেন অনেকে কাতার হামলা এ পর্যন্ত অননুমেয় উদ্যোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
গাজ্জা (ফিলিস্তিন)সোমবার ও মঙ্গলবার থেকে বিমান ও গোলাবর্ষণ অব্যাহতগাজ্জা সিটি ও অন্যান্য বসতি এলাকা, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর উপর হামলাকমপক্ষে ১৫০ জন নিহত, ৫৪০+ আহত; শুধু সোমবার ৬৭ জন মারা গেছে, আহত ৩২০; মঙ্গলবার ৮৩ জন নিহত, ২২৩ জন আহত অসহায় বেসামরিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী; মানবিক বিপর্যয় তীব্র হচ্ছে; আশ্রয়হীনদের সংখ্যা বাড়ছে।
লেবাননগত কয়েক দিনে যুদ্ধবিরতির মধ্যেই হামলাবেকা, হারমেল ও বারজা এলাকাকমপক্ষে ৫ জন নিহত, আরও আহত যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ, হিজবুল্লাহকে নিশানা, আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে; লেবাননের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
সিরিয়াসোমবার রাতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি যুদ্ধবিমানহোমসের বিমানঘাঁটি, লাতাকিয়া এলাকায় সামরিক ব্যারাকহতাহতের বিস্তারিত সংখ্যা পাওয়া যায়নি; বিস্ফোরণ বড় ছিল, ধ্বংস হয়েছে অবকাঠামো সিরিয়ার সরকার এটিকে “রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন” ও “আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি” হিসেবে অভিহিত করেছে।
তিউনিসিয়াগত কয়েক রাত ধরে ফ্লোটিলা জাহাজগুলো লক্ষ্য করা হয়েছেসিদি বু সাঈদ বন্দর, ‘ফ্যামিলি বোট’, ‘আলমা’ জাহাজতেমন বড় বড় হতাহতের খবর নেই; আগুন লেগেছিল, তবে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয় আজব ঘটনা আন্তর্জাতিক জলসীমায় সংঘটিত; ফ্লোটিলা জাহাজগুলো গাজ্জার অবরোধ ভাঙার প্রচেষ্টায় রয়েছে; সমুদ্র নীতিমালার প্রশ্ন উঠছে।
ইয়েমেন১০ সেপ্টেম্বর, সানা ও আল জাউফ প্রদেশে হামলাসানার সদর এলাকা, সরকারি কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য‐কেন্দ্র, আবাসিক এলাকাকমপক্ষে ৩৫ জন নিহত, ১৩১ জন আহত ইয়েমেনের যুদ্ধবিধ্বংসী অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে; সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত; আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলি উদ্বিগ্ন।

অন্যান্য বিষয় ও প্রেক্ষাপট

  • ইসরায়েল‐হামাস বিরোধ: গাজ্জা ও হামাসের মধ্যে চলা যুদ্ধবিধ্বংসী পরিস্থিতি এখান থেকেই শুরু, যা আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।
  • আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া: কাতার হামলার মতো ঘটনা, বিশেষ করে মধ্য‐পূর্বের শান্তি আলোচনা বা যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টার সময়, দেশগুলোকে আরও সতর্ক করেছে।
  • মানবিক সংকট: গাজ্জাতে অবরুদ্ধ জনসাধারণের জীবনধারা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব ‒ এই সবই ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করছে। আহত ও রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
  • সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইন: সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর সামরিক হামলা ও ড্রোন strikes, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টিতে এসব কার্যক্রম আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।

কীভাবে এ মুহূর্তে পরিস্থিতি গুরুতর?

  1. একাধিক দেশে একসাথে হামলা: শুধুমাত্র গাজ্জা বা ফিলিস্তিন নয়, আজ ছয়টি দেশে হামলা হওয়ায় অঞ্চলটি দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে।
  2. শহর ও বসতির ওপর আক্রমণ: শুধুমাত্র সামরিক‐লক্ষণীয় স্থান নয়, আশ্রয়কেন্দ্র, স্বাস্থ্য‐কেন্দ্র, আবাসিক এলাকা ও অন্যান্য বেসামরিক অবকাঠামোও ধ্বংস হচ্ছে।
  3. কূটনৈতিক ঝুঁকি বৃদ্ধি: কাতার‐হামাস বিষয়ক আলোচনা চলছিল যখন হামলা ঘটেছে; এই ধরণের হামলা আলোচনা প্রসেসও খণ্ডিত করতে পারে, যেমন‐ই হয়েছে।
  4. মানবিক বিপর্যয়: গাজ্জায় মৃত ও আহতের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি; সৈনিক নয়, সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খাবার, চিকিৎসা, পানীয় জলের অভাব, শত শত হাজার লোক বাড়ি ছাড়া ‒ এসব সমস্যা তীব্র হচ্ছে।

সম্ভাব্য ফলাফল ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

  • আঞ্চলিক সংঘর্ষ বাড়তে পারে: হিজবুল্লাহ, হুথি গোষ্ঠী, সিরিয়া‐লেবানন থেকে আরও হামলা হতে পারে, উত্তেজনায় escalation ঘটতে পারে।
  • শাস্তিমূলক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ: আন্তর্জাতিক আদালত, সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলো কাতার‐হামলা ও ইয়েমেন‐সীমানায় বিধ্বংসী হামলার জন্য ইসরায়েলের প্রতি চাপ বাড়াতে পারে। санкশন, নিন্দা, শান্তি আলোচনায় পরিবর্ধিত ভূমিকা নেওয়া হতে পারে।
  • মিডিয়া ও জনমত: সাধারণ জনগণের মধ্যে গর্জন বেড়েছে; মানবিক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো আরও শক্তভাবে এগিয়ে আসতে পারে।
  • শান্তি উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত: যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব, রাজনৈতিক সমঝোতা ও উদ্বাস্তু বিষয়ক আলোচনা সবই হামলার কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

গত কয়েক দিনের হামলা প্রমাণ করছে, সংঘাত শুধু গাজ্জায় সীমাবদ্ধ নয় — মধ্যপ্রাচ্যের একটি বড়াংশই এখন সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুদ্ধক্ষেত্র। মানবিক বিপর্যয়, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং কূটনৈতিক সংকট একসাথে বাড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হলে শান্তির পথ তৈরি করার জন্য প্রয়োজন সতর্ক নেতারা, আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধায়ক সূত্র, এবং একটি কার্যকর মানবিক সহায়তা কাঠামো।

MAH – 12757,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button