আঞ্চলিক

ছবি বিকৃতি থেকে হিজাবফোবিয়া, ব্যালটে জবাব দিলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার ঢাবি শাখার সাবিকুন্নাহার তামান্না সদস্য পদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার এই বিজয়কে শিক্ষার্থীরা হিজাবফোবিয়ার বিরুদ্ধে ব্যালটের জবাব হিসেবে দেখছেন।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দীন ফলাফল ঘোষণা করেন। সাবিকুন্নাহার তামান্না সদস্য পদে ১০,০৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, যা এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চ। ফলাফল ঘোষণার পর সিনেট ভবন শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়।

প্রচারণার প্রথম দিনে চারুকলায় তামান্নার হিজাব পরিহিত ছবি বিকৃত করার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। ওই ঘটনার পরেই তার প্রচারণা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

বিকৃত ছবি ও হিজাবফোবিয়ার প্রতিবাদ

ঢাবি চারুকলায় তামান্নার হিজাব পরা ছবিযুক্ত ব্যানার ভাঙচুর করা হয়। তার ছবির উপর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন তৈরি করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানায় এবং নির্বাচনে তামান্নাকে সমর্থন করে।

ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থী আলম সাখাওয়াত বলেন, “চারুকলায় তার ওপর করা জুলুমের প্রতিবাদে আমি প্রথম ভোট দিয়েছি। একজন নারীর পোশাকের স্বাধীনতা রয়েছে, আর এটি নিয়ে বিচার করা উচিত নয়। হিজাব-বোরকা পড়ার স্বাধীনতা সকলের অধিকার।”

মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আলমানি মোস্তাকিম তাহসিন বলেন, “অচেনা সত্ত্বেও আমি ডাকসুতে তামান্নার জন্য ভোট দিচ্ছি। এটি হিজাবফোবিয়ার এবং ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রতিক্রিয়া।”

সাবিকুন্নাহার তামান্নার প্রতিক্রিয়া

সাবিকুন্নাহার তামান্না জানান, তিনি ছোটবেলায় নিকাব পড়ার কারণে স্কুলে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এরপরও উচ্চশিক্ষায় এসে তিনি হিজাব পরিধানের স্বাধীনতা হারাননি। তিনি বলেন, “হিজাব-নিকাব আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। নারীরা প্রমাণ করছে যে হিজাব কোনও বাধা নয়; তারা ক্লাসরুম, কর্মক্ষেত্র এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তা প্রমাণ করেছে।”

শিক্ষার্থীদের সমর্থন ও উদ্দীপনা

ছাত্রীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে পোশাকের স্বাধীনতা সম্মানিত। প্রচারণার সময় তামান্নার ছবি বিকৃত হওয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে বিদ্বেষপূর্ণ পোস্টের পরও শিক্ষার্থীরা তার পক্ষে দাঁড়ায়।

আহমেদ আতাউল্লাহ সালমান, ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বলেন, “আমি প্রথমে হিজাব স্লোগান দিলাম, তারপর সবাই সাথে স্লোগান ধরে। মূলত তামান্না আপুর ওপর করা জুলুমের প্রতিবাদ ছিল এটি।”

প্রতিকূলতা ও জয়

তামান্নার বিজয় প্রমাণ করে যে শিক্ষার্থীরা হিজাব-ভিত্তিক বৈষম্য ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে প্রত্যাখ্যান করছে। প্রচারাভিযান চলাকালীন তিনি সামাজিক মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার হলেও ভোটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তার প্রতি সমর্থন দেখিয়েছেন।

এটি একটি প্রগতিশীল বার্তা দেয় যে নারী শিক্ষার্থীদের পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দরকার। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা মান্য করা সকলের দায়িত্ব।

বিশ্লেষণ

ঢাবি নির্বাচনে এই ঘটনা দেখাচ্ছে যে শিক্ষার্থীরা হিজাবফোবিয়া ও ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সমানাধিকারের প্রতি সচেতন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিজয় অন্য শিক্ষার্থীদের জন্যও উদ্দীপনা যোগাবে, যাতে তারা নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।

পরিশেষে

সাবিকুন্নাহার তামান্নার বিজয় শুধু একজন শিক্ষার্থীর নয়, বরং হিজাব এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি শিক্ষার্থীদের সমর্থনের প্রতীক। চারুকলায় ছবি বিকৃতির ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে যে হিজাব-ভিত্তিক বৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয়।

“ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা কীভাবে নারী শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা রক্ষা করবে, তা প্রমাণ করবে তাদের নির্বাচনী অংশগ্রহণের মাধ্যমে।”

এম আর এম – ১২৮৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button