গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

গাজা অঞ্চলে চলমান সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ঐ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকার প্রয়োজন।
এ মন্তব্য তিনি করেছেন বাংলাদেশে সফররত ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. মাহমুদ সিদকি আল-হাব্বাশের সঙ্গে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক বৈঠকে। বৈঠকে দুইপক্ষ গাজার বর্তমান পরিস্থিতি, ফিলিস্তিনিদের মানবিক সহায়তা, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের অটল সমর্থন ফিলিস্তিনের প্রতি
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের স্থায়ী ও অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্থায়ী শান্তির পথ হিসেবে দেখা উচিত।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “ফিলিস্তিনের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশ তাদের পাশে রয়েছে এবং থাকবে। আমরা আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করতে প্রস্তুত।”
ফিলিস্তিন প্রধান বিচারপতির কৃতজ্ঞতা
ড. মাহমুদ সিদকি আল-হাব্বাশ বাংলাদেশের নেতৃত্ব এবং জনগণের অবিচল সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য আরও দৃঢ় করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং বলেন, “ফিলিস্তিনের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এই ঐক্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
ফিলিস্তিন প্রধান বিচারপতির তিন দিনের সরকারি সফর বাংলাদেশের আমন্ত্রণে আয়োজন করা হয়েছে। সফরের মধ্যে বৈঠক, আলোচনাসভা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা অন্তর্ভুক্ত।
গাজার মানবিক সংকট ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
গাজা অঞ্চলে চলমান সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ বিপন্ন এবং লাখো পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সহায়তা ঘাটতির কারণে পরিস্থিতি দিন দিন মারাত্মক হয়ে উঠছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রদান এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজার স্থিতিশীলতা শুধুমাত্র বৈদেশিক নীতি ও কূটনৈতিক চেষ্টার মাধ্যমে অর্জিত সম্ভব। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান এবং ইসরায়েলের নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হলে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান: ইতিহাস ও প্রাসঙ্গিকতা
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সংলাপে আলোচিত বিষয়। এটি মূলত ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমারেখা অনুযায়ী ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ইসরায়েলকে নিরাপত্তা ও সীমিত ক্ষমতা সংরক্ষণ করতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। মো. তৌহিদ হোসেন এ বিষয়েও জোর দিয়েছেন যে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ছাড়া স্থায়ী শান্তি অর্জন সম্ভব নয়।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বাংলাদেশের ভূমিকা
ফিলিস্তিন প্রধান বিচারপতি ড. আল-হাব্বাশ মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য আরও শক্তিশালী করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকলে ফিলিস্তিনের স্বাধিকার রক্ষা সহজ হবে।
বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মানবিক সহায়তা, কূটনৈতিক সমর্থন এবং রাজনৈতিক চাপ বাড়াতে সক্ষম। এ বিষয়ে বাংলাদেশের নেতৃত্ব বিশ্বমঞ্চে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
গত কয়েক মাসে গাজায় সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কয়েকটি মুসলিম দেশ দ্রুত যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া গাজার সমস্যার স্থায়ী সমাধান কঠিন। বাংলাদেশসহ ফিলিস্তিনের সমর্থক দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগ এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি অটল সমর্থন একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথ তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভূমিকায় গুরুত্ব
বাংলাদেশ বহু বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে রয়েছে। ঢাকা থেকে নিয়মিত কূটনৈতিক সমর্থন, মানবিক সহায়তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। মো. তৌহিদ হোসেনের মতে, বাংলাদেশের স্থায়ী নীতি হলো ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা, ন্যায্য অধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্মানের রক্ষা।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট – ফিলিস্তিনিরা মানবিক সংকটে আক্রান্ত হলে আমরা তাদের পাশে থাকব। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমরা জবাবদিহিতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছি।”
গাজার সংকট আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্বারোপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা।
ফিলিস্তিন প্রধান বিচারপতির বাংলাদেশ সফর কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি অটল সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
MAH – 12742, Signalbd.com