বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঐক্যমত্য: ফ্যাসিবাদবিরোধী ১০ দফা সিদ্ধান্ত
বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঐক্যমত্য: ফ্যাসিবাদবিরোধী ১০ দফা সিদ্ধান্ত
আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি ২০২৫) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিমের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে তাঁরা ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমালোচনা পরিহারসহ ১০টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর ঘোষণা দেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো নিম্নরূপ:
- জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা: আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত স্বাধীন, সার্বভৌম, টেকসই গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা।
- দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও অর্থ পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
- মানবাধিকার রক্ষা: ভোটাধিকারসহ সকল মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা।
- সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন: ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
- দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা।
- ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য: আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তিকে নিয়ে দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।
- পারস্পরিক সমালোচনা পরিহার: ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা বলবে না।
- ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান রোধ: আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা।
- ইসলামী শরিয়াহ্র প্রতি সম্মান: ইসলামী শরিয়াহ্বিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া এবং ইসলামবিরোধী কোনো কথা না বলা।
- প্রশাসন থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপসারণ: বর্তমান প্রশাসনে বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা।
বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ সভায় আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছেছি।”
সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন
সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, “দেশ, মানবতা এবং রাজনীতির ব্যাপারে আমাদের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, বিএনপির মহাসচিব যেগুলো উপস্থাপন করেছেন, সেগুলো আমাদের একই কথা। আমরা আলোচনান্তে এ বিষয়েগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছেছি এবং আমরা আপনাদের (গণমাধ্যম) সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা যেন সুন্দর একটা দেশ ভবিষ্যতে গঠন করতে পারি, সে ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা এবং আন্তরিকতাও আমরা চাচ্ছি।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চরমোনাইয়ের পীর বলেন, “আমরা ‘দ্রুত সময়’ শব্দটি ব্যবহার করেছি। এবং বেশি সময়টা না নিয়ে যৌক্তিক— সেই যৌক্তিক সময়টা আমরা বলেছি এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে। এ রকম একটা কথা আমরা বলেছি।”
বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব ইমতিয়াজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান
উল্লেখ্য, এর আগে ২১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বরিশালে গিয়ে চরমোনাইয়ের পীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের এই সাক্ষাৎ দেশের ধর্মভিত্তিক ইসলামপন্থী রাজনীতিতে কৌতূহলের সৃষ্টি করে। এর এক সপ্তাহের মাথায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চরমোনাইয়ের পীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার কার্যালয়ে গেলেন।
এছাড়া, ২২ জানুয়ারি খেলাফত মজলিসের আমির, মহাসচিবসহ ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। খেলাফত মজলিস একসময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক ছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে একটি ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ জোট ছেড়ে যায় তারা। ২২ জানুয়ারির বৈঠকটি ছিল প্রায় তিন বছর পর।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে তারা।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতসহ অন্যান্য ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যের চেষ্টা চলছে। গত ২৪ জানুয়ারি ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলীয় এক কর্মসূচিতে চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেছিলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইসলামের পক্ষে এক । বাংলাদেশ