ভোটার তালিকায় কুকুরের নাম: যুক্তরাষ্ট্রে আলোচিত ঘটনা

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ভোটার তালিকায় দেখা গেছে এক অবিশ্বাস্য তথ্য—একজন নারী নাকি তাঁর নিজের পোষা কুকুরকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করিয়েছেন এবং সেই কুকুরের হয়ে একাধিকবার ভোটও দিয়েছেন। অবিশ্বাস্য হলেও এ ঘটনা সত্যি। এ নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত নারী লরা লি ইউরেক্স (৬২), যিনি ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টির বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের মামলা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অননুমোদিতভাবে ভোট দেওয়া, ভুয়া নথি দাখিল, মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং অস্তিত্বহীন সত্ত্বাকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করানো।
কিভাবে ঘটলো এই ঘটনা?
অরেঞ্জ কাউন্টি ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয় থেকে জানানো হয়, লরা নিজের কুকুরের নাম—মায়া জিন ইউরেক্স—কে ভোটার তালিকায় নিবন্ধন করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি ২০২১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত অভিশংসন নির্বাচনে এবং ২০২২ সালের প্রাইমারি নির্বাচনে কুকুরের নামে ডাকযোগে ব্যালট পাঠান।
প্রথম ভোটটি গৃহীত হলেও দ্বিতীয় ভোটটি বাতিল হয়ে যায়। পরে জানা যায়, লরা তাঁর এই অভিনব কাজ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও গর্ব করেছেন।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে তিনি নিজের কুকুর মায়ার গায়ে “I Voted” লেখা স্টিকার লাগিয়ে ছবি পোস্ট করেছিলেন। কুকুরটির মৃত্যুর পরও তিনি ২০২৪ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যালটের ছবি দিয়ে লিখেছিলেন—“মায়া এখনো তার নামে ব্যালট পাচ্ছে।”
মামলা ও আইনি প্রক্রিয়া
স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ার ওয়েস্টমিনস্টার সুপিরিয়র কোর্টে তাঁর হাজির হওয়ার কথা ছিল। যদি সব অভিযোগে তিনি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তাঁকে সর্বোচ্চ ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে:
- অননুমোদিতভাবে ভোট দেওয়া
- ভুয়া নথি দাখিল
- মিথ্যা তথ্য প্রদান
- কুকুরের নাম ব্যবহার করে ভুয়া ভোটার নিবন্ধন
কেন এমনটা সম্ভব হলো?
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে, কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে কুকুর ভোটার হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কিছু শিথিলতা রয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার আইন অনুযায়ী, রাজ্যের নির্বাচনে ভোটার নিবন্ধনের সময় আবাসিক প্রমাণপত্র বা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক নয়। ফলে শুধুমাত্র নাম, ঠিকানা ও জন্মতারিখ দিয়েই নিবন্ধন সম্ভব।
এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছিলেন লরা। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচনে ভোট দিতে হলে পরিচয়পত্র বা নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র প্রয়োজন হয়। তাই ২০২২ সালের ভোটটি বাতিল হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে ভোট জালিয়াতি বিতর্ক
যুক্তরাষ্ট্রে বহু বছর ধরেই ভোট জালিয়াতি নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরাজয়ের পর বিষয়টি আরও আলোচিত হয়। ট্রাম্পসহ রিপাবলিকান দলের অনেক নেতা দাবি করেছিলেন, ডেমোক্র্যাটরা জালিয়াতির মাধ্যমে জয়ী হয়েছেন। যদিও এ অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।
এই ঘটনার ফলে ভোটার আইডি আইন কঠোর করার দাবি আবারো জোরালো হতে পারে। রিপাবলিকানরা দীর্ঘদিন ধরে বলছেন, ভোটের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রত্যেক ভোটারের জন্য বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে হাস্যরস ছড়িয়েছে। অনেকেই মজা করে লিখেছেন, “মায়া হয়তো প্রার্থী নির্বাচনেও মানুষের চেয়ে বেশি বিচক্ষণ ছিল।”
আবার অনেকেই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, ভোটার তালিকায় এভাবে ভুয়া নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হলে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রে ভোটার তালিকা কিভাবে কাজ করে?
যুক্তরাষ্ট্রে ভোটার তালিকা ব্যবস্থাপনা প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব নিয়মে চলে। ক্যালিফোর্নিয়ায় নিবন্ধন করতে হলে নাগরিকত্বের শপথ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিলেই অনলাইনে ভোটার হওয়া যায়।
বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মতো এখানে জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো কোনো বাধ্যতামূলক ডকুমেন্ট সব সময় যাচাই করা হয় না। ফলে এ ধরনের ঘটনার সুযোগ থেকে যায়।
বাংলাদেশে এর প্রভাব বা শিক্ষা
বাংলাদেশে ভোটার তালিকা নিবন্ধনে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই করা হয়। তাই কুকুর বা কোনো প্রাণীকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করা সম্ভব নয়।
তবে এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার বিষয় হলো—যেকোনো রাষ্ট্রে যদি প্রক্রিয়া শিথিল থাকে, তাহলে সিস্টেমকে অপব্যবহার করে এমন ভুয়া ভোটার তৈরি করা সম্ভব। তাই নির্বাচন কমিশনের জন্য সবসময় কঠোর ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বজায় রাখা জরুরি।
ভোট একটি নাগরিক অধিকার এবং গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। ক্যালিফোর্নিয়ার এই ঘটনাটি হয়তো অনেকের কাছে মজার মনে হতে পারে, কিন্তু এর ভেতরে রয়েছে গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা।
ভোটার তালিকায় কুকুরের নাম যুক্ত হওয়া শুধু একটি ব্যতিক্রম নয়, বরং একটি সতর্কসংকেত—নির্বাচনী প্রক্রিয়া কতটা নিরাপদ ও সুরক্ষিত হওয়া উচিত।
যদি লরা লি ইউরেক্স দোষী সাব্যস্ত হন, তবে এটি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ভোট জালিয়াতি রোধে নতুন আইন তৈরির পথও খুলে দিতে পারে।
MAH – 12729, Signalbd.com