কাতারে ইসরায়েলি হামলায় নীরব যুক্তরাষ্ট্র

কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হলেও ঘটনাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। ওয়াশিংটন শুধু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
হামলার বিস্তারিত ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার পরপরই দোহায় একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। শহরের আকাশে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়, যা আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, তারা হামাসের উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে সীমিত পরিসরে এই হামলা চালিয়েছে। তবে কোথায় আঘাত হেনেছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি তারা।
হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজধানীতে এক বৈঠকের সময় এই হামলা চালানো হয়। এতে হামাস নেতাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লেও তাদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে এখনও কোনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা
হামলার পরপরই সাংবাদিকরা হোয়াইট হাউসের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে উপপ্রেস সেক্রেটারি আনা কেলি জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখনো কোনো মন্তব্য করার অবস্থানে নেই। তিনি বলেন, “আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা কৌশলগত। দোহায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি থাকায় বিষয়টি সংবেদনশীল। ফলে ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে অবস্থান না নিয়ে অপেক্ষা করছে।
কাতারের অবস্থান ও ক্ষোভ
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ ও হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর কয়েকজন সদস্য অবস্থান করছিলেন।”
কাতার দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ধরনের হামলা তাদের কূটনৈতিক অবস্থানকেও চাপে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
ইসরায়েল-হামাস সংঘাত
গত বছর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি অভিযানের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। হামাসের নেতাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। তবে কাতারের মতো একটি তৃতীয় রাষ্ট্রে হামলা চালানো এই প্রথম।
এ ঘটনার ফলে কাতার-ইসরায়েল সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যাবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখনো নীরব, তবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন কূটনীতিক দোহায় বেসামরিক এলাকায় হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি শিগগিরই কোনো সুস্পষ্ট প্রতিক্রিয়া না জানায়, তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তাদের কূটনৈতিক অবস্থানের ওপর। একইসঙ্গে কাতারের সঙ্গে সম্পর্কেও অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলা কেবল ইসরায়েল-হামাস সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কূটনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করবে। বিশেষ করে দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি থাকায় ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়া এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারা হয়তো ইসরায়েলি পদক্ষেপে সরাসরি বিরোধিতা করতে চাইছে না। তবে এতে তাদের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”
শেষ কথা
দোহায় ইসরায়েলি হামলার পর আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন প্রশ্ন উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র নীরব থাকলেও পরিস্থিতি যেকোনো সময় মোড় নিতে পারে। আগামী দিনগুলোতে ওয়াশিংটনের আনুষ্ঠানিক অবস্থান কী হবে, তা নিয়েই এখন সবার দৃষ্টি।
এম আর এম – ১২৫২,Signalbd.com