শিক্ষা

ভোটার লাইনে প্রার্থীদের প্রচারণা, বিরক্ত শিক্ষার্থীরা

Advertisement

ভোটের দিন উত্তেজনা, লাইনে ভিড় ও বিতর্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে আজ ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ও উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। তবে ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রার্থীদের প্রচারণা এবং লিফলেট বিতরণের কারণে অনেক ভোটার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

প্রার্থীরা কেন্দ্রগুলোর প্রবেশমুখে কৃত্রিম ভিড় তৈরি করে ভোটারদের হাতে হাতে লিফলেট দিচ্ছেন। এতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশে সমস্যা হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র, কার্জন হল, উদয়ন স্কুলসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে একই পরিস্থিতি দেখা গেছে।

ভোটারদের অভিযোগ: ‘শান্তিতে ভোট দিতে পারছি না’

ভোটাররা বলছেন, প্রার্থীদের এমন আচরণ সম্পূর্ণ অনৈতিক। একজন শিক্ষার্থী বলেন,
“ভোট দেওয়া আমাদের অধিকার। কিন্তু ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের এমন ভিড়ের কারণে প্রবেশ করতে সময় লাগছে। এর পাশাপাশি বারবার একই লিফলেট দেওয়া বিরক্তিকর।”

নির্বাচনী আচরণবিধি: কোথায় লঙ্ঘন?

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো ধরনের প্রচারণা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়া, ৭ সেপ্টেম্বর থেকেই সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

কিন্তু প্রার্থীরা এই নিয়ম উপেক্ষা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তে ভোটারদের প্রভাবিত করতে কেন্দ্রের গেটের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডাকসুর মানবসেবা সম্পাদক এ বি জোবায়ের অভিযোগ করেন,
“ছাত্রদল কৃত্রিম জটলা তৈরি করে ফুল প্যানেলের লিস্ট দিচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে তারা আমার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় এবং আমাকে ‘মবস্টার’ বলে হুমকি দেয়।”

এ ঘটনার সময় ছাত্রদল ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের প্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

পর্যবেক্ষকের প্রতিক্রিয়া: কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান

পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন,
“এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভোটের স্বচ্ছতা নষ্ট করে। নির্বাচন কমিশনকে আরও কঠোর হতে হবে।”

জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফারুক শাহ বলেন,
“আমরা ইতোমধ্যে কিছু প্রার্থীকে সরিয়ে দিয়েছি। দুইটি হলকে আলাদা করা হয়েছে যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়।”

ডাকসু নির্বাচন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

ডাকসু নির্বাচনকে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। ২০১৯ সালে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে নিয়মিত নির্বাচন দাবি জোরদার হয়।

ডাকসু শুধু একটি ছাত্র সংসদ নয়; এটি দেশের জাতীয় রাজনীতিরও প্রতিচ্ছবি। অনেক জাতীয় নেতা তাদের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেছেন ডাকসু থেকে। তাই এই নির্বাচনে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র হয়।

প্রচারণার নতুন কৌশল: অনলাইন বনাম অফলাইন

এই নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা ছিল ব্যাপক। তবে ভোটের দিনে কেন্দ্রের সামনে সরাসরি প্রচারণা চালানো আচরণবিধির সরাসরি লঙ্ঘন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,
“ডিজিটাল প্রচারণা যত বাড়ছে, অফলাইন কৌশলও পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু আচরণবিধি না মানলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয়।”

ভোটারদের প্রত্যাশা: শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন

ভোটাররা বলছেন, তারা একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, প্রার্থীরা নিয়ম মেনে চললে এবং প্রশাসন কঠোর হলে নির্বাচন নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না।

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, তারা ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। প্রার্থীরা নিয়ম না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে কি পর্যাপ্ত নজরদারি আছে?

ডাকসু নির্বাচনের ইতিহাস: সংক্ষিপ্ত ঝলক

  • প্রথম ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯৫৩ সালে।
  • ১৯৯০-এর পর দীর্ঘদিন নির্বাচন বন্ধ ছিল।
  • ২০১৯ সালে ২৮ বছর পর নির্বাচন হলেও নানা বিতর্ক ছিল।
  • ২০২৫ সালের নির্বাচনকে নতুন সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু ভোটের দিনে আচরণবিধি লঙ্ঘন, কৃত্রিম ভিড় এবং প্রার্থীদের চাপ ভোটারদের জন্য বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে এবং সব পক্ষকে আইন মেনে চলতে হবে—তবেই এই নির্বাচন সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক উদাহরণ হবে।

MAH – 12708,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button