বিশ্ব

ঐক্যের শক্তি মুসলিম দেশগুলোকে এক থাকার আহ্বান ইরানের প্রেসিডেন্টের

ইরানি প্রেসিডেন্টের জোরালো বার্তা: ঐক্য ছাড়া মুক্তি নেই

তেহরানে ইরাকি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন – বহিরাগত চাপ, নিষেধাজ্ঞা ও শত্রু রাষ্ট্রগুলোর ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অবিচ্ছিন্ন সহযোগিতা ও ঐক্য অপরিহার্য

তার মতে, একতাবদ্ধ মুসলিম বিশ্বকে কোনো শক্তিই পরাজিত করতে পারবে না, কিংবা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে দুর্বল করা সম্ভব হবে না। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন।

মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য: সময়ের দাবি

মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন:

“মুসলমানদের শক্তি তাদের মধ্যকার ঐক্য ও সংহতির মধ্যে নিহিত। ইসলামিক ঐক্য ভাঙার ষড়যন্ত্র সবসময় ছিল, তাই আমাদের আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে।”

তার মতে, মুসলিম দেশগুলোর উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া বিকল্প নেই। বহিরাগত চাপ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের চাপ, এবং ইসরাইলি আগ্রাসন, এদের মোকাবেলায় সম্মিলিত অবস্থান নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

ইসলামিক ঐক্যের পথে চ্যালেঞ্জ

ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান নতুন কিছু নয়। ইতিহাসে একাধিকবার দেখা গেছে, মুসলিম বিশ্বে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন কারণে। পেজেশকিয়ান সতর্ক করেছেন যে:

  • ইসলামিক ঐক্যকে ধ্বংস করার জন্য বহিরাগত শক্তির ষড়যন্ত্র এখনো চলমান।
  • মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে নানা কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে।
  • ইসরাইলি শাসনব্যবস্থা এখনো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, মুসলমানদের উচিত নিজেদের মধ্যে জাতিগত, ভাষাগত বা সাম্প্রদায়িক বিভাজন ভুলে গিয়ে ঐক্যের পথে এগিয়ে আসা

ইরান-ইরাক সম্পর্ক: ঐতিহাসিক বন্ধন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ইরানি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন:

“ভৌগোলিক সীমারেখা কখনো ইরান ও ইরাকের জনগণের সম্পর্ককে দুর্বল করতে পারে না। আমাদের মধ্যে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধন অত্যন্ত গভীর।”

পেজেশকিয়ান জোর দিয়ে বলেন, ইরান ইরাকের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে চায়। তিনি ইরাকের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

বিশ্ব রাজনীতিতে মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান

বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিতে মুসলিম দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া যুদ্ধ, ইয়েমেন সংকট, ফিলিস্তিনের অবস্থা – সব মিলিয়ে ইসলামিক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে:

  • মুসলিম দেশগুলো যদি একত্রিত হয়, তবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও তাদের প্রভাব বহুগুণে বাড়বে।
  • তেল ও গ্যাসের নিয়ন্ত্রণ মুসলিম বিশ্বের হাতে রয়েছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতির অন্যতম মূল চালিকা শক্তি।
  • যদি এই সম্পদ ব্যবহারে সমন্বয় হয়, তবে বহিরাগত চাপ মোকাবেলা করা সহজ হবে।

পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকা ও ষড়যন্ত্র

ইতিহাস সাক্ষী যে পশ্চিমা বিশ্ব বারবার মুসলিম দেশগুলোকে দুর্বল করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ইরাক যুদ্ধ, আফগানিস্তান যুদ্ধ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ – সবকিছুর পেছনে রয়েছে বিভাজন সৃষ্টির ষড়যন্ত্র।

পেজেশকিয়ানের মতে:

  • ইসলামিক দেশগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য নিষেধাজ্ঞা নীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
  • ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে বিভেদ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন:

“যদি মুসলিম দেশগুলো এক থাকে, তবে কোনো শক্তিই আমাদের পরাজিত করতে পারবে না।”

ঐক্যের উদাহরণ: ইতিহাস থেকে শিক্ষা

ইতিহাসে মুসলিম দেশগুলো যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন তারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে। উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফত ছিল তার বড় উদাহরণ।
আজকের দিনে সেই ঐক্যের অভাবের কারণে মুসলিম বিশ্ব একের পর এক সংকটে পড়ছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় এসেছে সম্মিলিত কৌশল নেওয়ার।

হামাস ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব

অন্যদিকে, হামাস যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। যদিও এর মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, অনেক বিশ্লেষকের মতে এর পেছনেও রয়েছে কূটনৈতিক খেলা।
তবে মুসলিম দেশগুলো যদি এক হয়ে ফিলিস্তিন ইস্যুতে একক অবস্থান নেয়, তাহলে সমাধান পাওয়া সম্ভব।

ঐক্যের মাধ্যমে সম্ভাবনা: উন্নয়ন ও শক্তিশালী অর্থনীতি

যদি মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হয়, তবে:

  • অর্থনৈতিক জোট গঠন করা সম্ভব।
  • বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তন হতে পারে।
  • উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে।

সারসংক্ষেপ

ইরানের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য শুধু ইরান-ইরাক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য এক বড় শিক্ষা। ঐক্য ছাড়া মুসলিম দেশগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে না। সময় এসেছে:

  • বাহ্যিক চাপ মোকাবেলায় সহযোগিতা বাড়ানো।
  • সাম্প্রদায়িকতা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
  • ইসলামিক ঐক্যকে শক্তিশালী করা।

MAH – 12701,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button