নিউজিল্যান্ড সরকার এক বছর আগে স্কুলগুলোতে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই এক বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্প্রতি নতুন একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেশজুড়ে ২৫টি স্কুলের ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৭৭ জন শিক্ষার্থীর মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত—পজিটিভ, নেগেটিভ এবং অনিশ্চিত।
শিক্ষার্থীদের পজিটিভ প্রতিক্রিয়া
গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল ফোন নিষিদ্ধের ফলে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ বেড়েছে। তারা জানিয়েছেন, ফোনে অতিরিক্ত সময় কাটানো কমে যাওয়ায় মানসিক স্বস্তি ও শিক্ষায় মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “ফোন না থাকলে আমরা আমাদের ক্লাসে এবং পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারি। অন্যথায়, সারাদিন ফোনে সময় কাটাতাম, যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।”
শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেছেন, নিষিদ্ধের ফলে তাদের বন্ধুবান্ধব ও সহপাঠীদের সঙ্গে মুখোমুখি যোগাযোগের অভ্যাস বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি সামাজিক দক্ষতা ও দলগত কাজের উন্নতিতে সহায়ক হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া
তবে সকল শিক্ষার্থী এই পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে দেখেননি। অনেকেই বলছেন, ফোন না থাকার কারণে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে, যা তাদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
একজন শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, “যদি আমরা জরুরি পরিস্থিতিতে ফোন ব্যবহার করতে না পারি, তবে নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হতে পারে।”
শিক্ষকদের দ্বৈত মানদণ্ডও নেগেটিভ প্রতিক্রিয়ার একটি কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু শিক্ষক নিয়ম মানলেও নিজেদের ফোন ব্যবহার করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের কাছে অনিয়মিত ও অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, “যদি শিক্ষকরা ব্যবহার করতে পারেন, আমাদের কেন ব্যবহার করতে না দেওয়া হবে?”
অনিশ্চিত অবস্থায় শিক্ষার্থীরা
গবেষণায় উল্লেখযোগ্য অংশ শিক্ষার্থী অনিশ্চিত বা বিভ্রান্ত অবস্থায় রয়েছে। তারা মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার আগে তাদের মতামত নেওয়া হয়নি এবং কোনো আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কিছু শিক্ষার্থী পরামর্শ দিয়েছেন, ফোন ব্যবহারকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার বদলে, সঠিকভাবে ফোন ব্যবহারের জন্য শিক্ষা প্রদান করা উচিত। তারা বলেন, বিরতির সময় ফোন ব্যবহার করার অনুমতি দিলে এবং শিক্ষকদেরও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে।
প্রযুক্তি ব্যবহার ও বিকল্প পদ্ধতি
গবেষণায় উঠে এসেছে, কিছু স্কুলে শিক্ষার্থীরা ফোন নিষিদ্ধ হওয়ার পরও বিকল্প হিসেবে ওয়াকি-টকি ব্যবহার শুরু করেছে। এটি দেখাচ্ছে যে, প্রযুক্তির প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ কমানো সহজ নয়।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, প্রযুক্তি ব্যবহার শিখানো এবং দায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে। শুধুমাত্র নিষিদ্ধ করলেই শিক্ষার্থীদের আচরণ পরিবর্তন হবে না।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা অল্পমেয়াদী সুবিধা এনে দিতে পারে—যেমন পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি বা মানসিক চাপ কমানো। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার শেখানো এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
তাদের মতে, প্রযুক্তি জীবনের অংশ, এবং শিক্ষার্থীরা চাই নিরাপদ ও দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করতে শেখার সুযোগ। নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে একটি সমন্বিত শিক্ষাদান পদ্ধতি বেশি কার্যকর হবে।
শেষাংশ
নিউজিল্যান্ডের স্কুলগুলোর মোবাইল ফোন নিষিদ্ধের এক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া পজিটিভ, নেগেটিভ এবং অনিশ্চিত—এগুলোই মূলত শিক্ষার মান, সামাজিক দক্ষতা, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষণা থেকে স্পষ্ট হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা একক সমাধান নয়। শিক্ষার্থীদের জন্য সঠিক ব্যবহার শিখানো, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মতামতের অন্তর্ভুক্তি অবশ্যই প্রয়োজন।
এম আর এম – ১২৩৬,Signalbd.com



