বাংলাদেশ

আজ রাত ৯টা ২৮ মিনিটে শুরু হবে চন্দ্রগ্রহণ

Advertisement

আজ রবিবার রাত ৯টা ২৮ মিনিট থেকে শুরু হতে যাচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও এ বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ চলাকালীন সময়ে চাঁদ লালচে রঙে রূপ নেবে, যা অনেকের কাছে “ব্লাড মুন” নামেও পরিচিত।

এটি শুধু আকাশপ্রেমীদের জন্য নয়, বিজ্ঞানীদের কাছেও বিশেষ এক গবেষণার সুযোগ। কারণ চন্দ্রগ্রহণ চলাকালীন চাঁদের লালচে আভা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অবস্থাও প্রতিফলিত করে।

চন্দ্রগ্রহণ কখন শুরু ও শেষ হবে

বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী আজ রাত ৯টা ২৮ মিনিটে শুরু হবে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। ধীরে ধীরে চাঁদের উপর পৃথিবীর ছায়া পড়তে থাকবে। রাত ১০টা ৩০ মিনিট নাগাদ পূর্ণগ্রাস গ্রহণ শুরু হবে এবং প্রায় ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত আকাশে এ দৃশ্য দৃশ্যমান থাকবে।

পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের মূল আকর্ষণ রাত ১১টার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত চলবে। এ সময় চাঁদ সম্পূর্ণ অদৃশ্য না হয়ে লালচে বা তামাটে রঙে রূপান্তরিত হবে, যা সবার দৃষ্টি কাড়বে।

বাংলাদেশসহ কোন কোন দেশ থেকে দেখা যাবে

বাংলাদেশ ছাড়াও এ চন্দ্রগ্রহণ দৃশ্যমান হবে ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ থেকে। পূর্বে ইন্দোনেশিয়ার হিলা দ্বীপ থেকে শুরু করে পশ্চিমে আফ্রিকার কেনিয়ার মোম্বাসা পর্যন্ত এ গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে দেখা যাবে।

তবে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ অংশ এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে গ্রহণটি দেখা যাবে না।

চন্দ্রগ্রহণ কীভাবে ঘটে

চন্দ্রগ্রহণ ঘটে যখন পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে অবস্থান করে। এ সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে এবং তা আংশিক বা পূর্ণগ্রাস গ্রহণে রূপ নেয়। পূর্ণগ্রাস গ্রহণের সময় চাঁদ কালো হয়ে যায় না, বরং লালচে আলোয় আলোকিত হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে সূর্যের আলো প্রতিসরিত হয়ে চাঁদের উপর পৌঁছায়। এই প্রতিসরিত আলোয় চাঁদ লাল বা তামাটে রঙ ধারণ করে।

আকাশপ্রেমী ও সাধারণ মানুষের জন্য গুরুত্ব

আজকের চন্দ্রগ্রহণ শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক দিক থেকেই নয়, সাধারণ মানুষের কাছেও বিশেষ আকর্ষণীয়। যারা রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি অনন্য অভিজ্ঞতা হবে।

বিজ্ঞানীদের মতে, চাঁদের লালচে রঙ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব, দূষণ এবং আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কেও ধারণা দেয়। তাই এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পূর্বের চন্দ্রগ্রহণের অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশ থেকে সর্বশেষ পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা গিয়েছিল ২০২২ সালে। এরপর আংশিক গ্রহণ কয়েকবার দেখা গেলেও পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখার সুযোগ আসেনি। দীর্ঘদিন পর আবারো এ ধরনের এক মহাজাগতিক দৃশ্য চোখের সামনে ধরা দেবে।

অতীতে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণকে নিয়ে নানা কুসংস্কার প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে মানুষ একে বিজ্ঞান ও মহাজাগতিক সৌন্দর্যের দিক থেকেই বেশি গুরুত্ব দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আকাশ পরিষ্কার থাকলে আজকের গ্রহণ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে। খালি চোখেই চন্দ্রগ্রহণ উপভোগ করা সম্ভব, তবে টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলার ব্যবহার করলে দৃশ্য আরও চমৎকার লাগবে।”

তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু বিনোদনের নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জন্যও মহাকাশ বিজ্ঞান শেখার একটি কার্যকর উপায়।”

চন্দ্রগ্রহণ দেখার সময় কী কী সতর্কতা মানতে হবে

যদিও সূর্যগ্রহণ দেখার সময় বিশেষ চশমা ব্যবহার করতে হয়, তবে চন্দ্রগ্রহণ দেখার ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি নেই। খালি চোখে এটি নিরাপদে দেখা যায়।

তবে শহরের আলোকদূষণ থেকে দূরে গ্রামীণ এলাকায় গেলে আকাশ আরও পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে। তাই যারা সুযোগ পাবেন, তারা খোলা জায়গায় গিয়ে এই বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।

পরিশেষে

আজকের পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ আকাশপ্রেমী, বিজ্ঞানী ও সাধারণ সবার জন্য একটি স্মরণীয় রাত হতে যাচ্ছে। রাত ৯টা ২৮ মিনিট থেকে শুরু হয়ে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা ২৭ মিনিট ধরে চলা এই গ্রহণ নিঃসন্দেহে চাঁদপ্রেমীদের মনে গেঁথে থাকবে।

ভবিষ্যতে আবার কবে এ ধরনের দৃশ্য দেখা যাবে তা নির্ভর করছে মহাজাগতিক অবস্থার ওপর। তবে আজকের রাতটি হয়ে উঠতে পারে আপনার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় রাত।

এম আর এম – ১২২৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button