
ফেনীর হাফিজিয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস এবং ট্রাকের সংঘর্ষে বাসের সুপারভাইজার ও হেলপার প্রাণ হারিয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় বাস চালক গুরুতর আহত হয়েছেন এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনা ঘটে রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে। স্থানীয় পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিল শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস। হাফিজিয়া এলাকায় পৌঁছানোর পর একটি ট্রাক সড়কের মধ্যে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়। ঠিক সেই সময়ে বাসটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়।
হতাহতের বিস্তারিত
নিহতরা হলেন:
- রবিউল ইসলাম (৩৬) – বাসের সুপারভাইজার, পাবনার সাথিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে।
- অপর নিহতের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
আহত বাস চালকের নাম রফিক (৬০)। আহতদের দ্রুত ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক হেলপারকে মৃত ঘোষণা করেন। বাস চালক রফিকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
দুর্ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত স্থানীয়রা জানান, ট্রাকটি হঠাৎ সড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলে বাসটি ধাক্কা দেয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। স্থানীয়রা জানান, “বাসটি খুব দ্রুত আসছিল, ট্রাক হঠাৎ দাঁড়িয়ে থাকায় কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া রাস্তার দৃশ্যও কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।”
পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
মহিপাল হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হারুন অর রশিদ বলেন,
“দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দেয়। এতে এক সুপারভাইজার এবং হেলপার নিহত হয়েছেন। বাস চালকের অবস্থা গুরুতর। ট্রাক চালককে আটক করার চেষ্টা চলছে। দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও ট্রাক সরিয়ে ফেলার পর যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।”
ওসি আরও জানান, বাস ও ট্রাকের চালকের দায়বোধ এবং দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাকটি হঠাৎ সড়কে দাঁড়ানোর কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিরাপত্তা ঝুঁকি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক। যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক এবং ছোট যানবাহন প্রায়শই এখানে চলাচল করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়মিত ও হঠাৎ দাঁড়ানো যানবাহন, দ্রুতগতিতে চলা বাস, এবং অপর্যাপ্ত সিগন্যালিং সিস্টেম এই ধরনের দুর্ঘটনার মূল কারণ।
গত দুই বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায়ই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাস্তার দৈর্ঘ্য ও যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নজরদারি, রাস্তা সংস্কার ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
আহতদের চিকিৎসা ও হাসপাতালের প্রস্তুতি
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, আহতদের তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে আনা হয়। হেলপারকে মৃত ঘোষণা করা হলেও বাস চালক রফিককে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে। হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক বলেন, “এই ধরনের দুর্ঘটনায় সময়মতো দ্রুত চিকিৎসা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ঘটনার ফলে গুরুতর আহতদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়।”
দুর্ঘটনার সামাজিক প্রভাব
ফেনীর স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মহাসড়কে এমন দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবারগুলোও ভয় পাচ্ছে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে দূরপাল্লার বাসে পাঠাতে।
এক স্থানীয় বাসচালক বলেন, “এই দুর্ঘটনা আমাদের সবাইকে সতর্ক করল। সড়কে সবাইকে আরও সাবধান হতে হবে।”
নিরাপত্তা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রী ও ট্রাক চলাচলের সময় সিগন্যাল, ফ্ল্যাশার এবং পুলিশি নজরদারির ব্যবস্থা আরও শক্ত করতে হবে। এছাড়া:
- ব্যস্ত স্থানে হাইওয়ে পুলিশির সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
- দ্রুতগামী বাস ও ট্রাকের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচি।
- রাস্তার পাশে হঠাৎ দাঁড়ানো যানবাহনের জন্য সতর্কতা সাইনবোর্ড স্থাপন।
- ট্রাক এবং যাত্রীবাহী বাস চালকদের জন্য নিয়মিত ট্রাফিক সুরক্ষা প্রশিক্ষণ।
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি বড় সামাজিক সমস্যা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুর্ঘটনার সংখ্যা সর্বাধিক। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দ্রুতগতি, নিয়ম না মানা, এবং সড়কের খারাপ অবস্থা দুর্ঘটনার মূল কারণ।
ফেনী হাইওয়ের অতীত দুর্ঘটনা
ফেনী জেলা এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্য অতীতেও পরিচিত। গত কয়েক বছরে ফেনীর বিভিন্ন স্থানে ট্রাক-বাস সংঘর্ষে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশ আরও সতর্কতার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ফেনীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘটে যাওয়া এই ট্রাক-বাস সংঘর্ষ সামাজিকভাবে অনেকগুলো প্রশ্ন তৈরি করেছে। সড়কের নিরাপত্তা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলার গুরুত্ব পুনরায় সামনে এসেছে। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা এবং নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানানো হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ জানতে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করতে প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ফেনী থেকে রিপোর্টিং করেছেন সিগনালবিডি ডটকমের সংবাদদাতা।
MAH – 12675, Signalbd.com