বানিজ্য

নিত্যপণ্যের বাজারে শীর্ষে মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ দ্বিতীয় স্থানে

বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় পরিবর্তন এসেছে শীর্ষস্থানে। দীর্ঘদিন ধরে বাজারের শীর্ষে থাকা সিটি গ্রুপকে পেছনে ফেলে ২০২৪ সালে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই) শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। নতুন বিনিয়োগ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমজিআই এখন দেশের বৃহত্তম নিত্যপণ্য আমদানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

বাজারের বর্তমান অবস্থা

গত এক দশকে নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচ শিল্পগ্রুপের বাজার অংশীদারিত্ব ৭৫ শতাংশ থেকে কমে ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রতিযোগিতার ফলে নতুন শিল্প গ্রুপগুলোর প্রবেশ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে প্রাণ-আরএফএল, স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস এবং ডেল্টা এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ বড় আকারে বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি মাহবুব গ্রুপ, আকিজ ইনসাফ, আকিজ রিসোর্সেস এবং আকিজ ভেঞ্চারও বাজারে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে।

এমজিআইয়ের সাফল্যের রহস্য

এমজিআইয়ের সাফল্যের রহস্য

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই) ধারাবাহিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। এমজিআই-এর চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল জানান, “ভোগ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত এখন বৃহৎ শিল্প। দীর্ঘ পরিকল্পনা এবং ক্রমাগত বিনিয়োগের ফলে আমরা এই অবস্থানে এসেছি।”

২০২৪ সালে নিত্যপণ্যের বাজারে এমজিআই-এর অংশীদারিত্ব ছিল ১৭ শতাংশ, যেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিটি গ্রুপের অংশীদারিত্ব ১৫ শতাংশ

নতুন বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতা

বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজারে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ তাদের নতুন শিল্পপার্ক “কালীগঞ্জ এগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড”-এ গম, ময়দা ও সুজি উৎপাদন শুরু করেছে। ডেল্টা এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে নতুন কারখানা স্থাপন করেছে। এছাড়া স্মাইল ফুড প্রোডাক্টসও বড় বিনিয়োগে বাজারে প্রবেশ করেছে।

বাজার বিশ্লেষণ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, ২০২৪ সালে সাতটি প্রধান নিত্যপণ্য ও কাঁচামাল আমদানি হয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ টন, যার মূল্য ৬৮১ কোটি মার্কিন ডলার। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এসব পণ্যের খুচরা বাজারমূল্য ৮৯-৯৬ হাজার কোটি টাকা।

ট্যারিফ কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের নিত্যপণ্যের ৮৯ শতাংশ আমদানি করা হয় এবং মাত্র ১১ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হয়।

সিটি গ্রুপের নতুন কৌশল

সিটি গ্রুপ তাদের ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনতে রাসায়নিক, কাগজ, এলপিজি, সিমেন্টসহ বহুমুখী খাতে বিনিয়োগ শুরু করেছে। গ্রুপটির পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা জানান, “ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও আমরা বিনিয়োগ বাড়াচ্ছি, যা ভবিষ্যতে ফলপ্রসূ হবে।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

প্রতিযোগিতামূলক বাজার গড়ে তুলতে বিশেষজ্ঞরা আইনি কাঠামোর সংস্কারের পরামর্শ দিচ্ছেন। সিপিডি-এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “সরকারকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য আইনগত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।”

বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজারে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং নতুন নতুন গ্রুপগুলোর আগমনে প্রতিযোগিতা আরও বাড়ছে। এমজিআই-এর শীর্ষস্থান অর্জন প্রমাণ করে, ধারাবাহিক বিনিয়োগ ও সঠিক ব্যবসায়িক কৌশল গ্রহণ করলে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকা সম্ভব।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button