
কিয়ামতের বিভীষিকাময় দিনে প্রত্যেক মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। সেদিন কেউ কারও জন্য দায়বদ্ধ থাকবে না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, “সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে, তার মা ও তার বাবা থেকে, তার স্ত্রী ও তার সন্তান-সন্ততি থেকে” (সুরা আবাসা, আয়াত: ৩৪-৪০)। তবে কিছু কিছু চেহারা উজ্জ্বল ও আলোকিত হবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এমন মানুষদের দেখতে নবী (সা.) এবং শহিদরাও ঈর্ষান্বিত হবেন।
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসা
মহান রব নির্দেশ দিয়েছেন, “হে নবী, তুমি তাদেরকে বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন” (সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ৩১)। হাদিসেও এসেছে, কিয়ামতের দিনে নবী (সা.) ও শহিদরা ঈর্ষা করবে তাদের উপর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসে।
মুমিনদের জন্য অন্যতম শর্ত হলো পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা। আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) বলেছেন, “কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না মুমিন হও। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন বিষয় অবহিত করবো না, যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো, পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৫১৯৩)।
হাশর-নাশরে আল্লাহর নূর
সাফওয়ান ইবন আসসাল (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসে, তাদের সঙ্গে পরকালে হাশর-নাশর হবে। আল্লাহ তাদের বিশেষ নূর প্রদান করবেন, যার আলোতে তাদের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যাবে। এই আলোকিত চেহারা দেখে নবী ও শহিদরাও ঈর্ষান্বিত হবেন।
মু’আয ইবনু জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, আল্লাহ বলেন, “আমার মর্যাদা ও পরাক্রমের জন্য যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছে তাদের জন্য আলোর মঞ্চ রয়েছে। নবী ও শহিদরাও তাদের সঙ্গে ঈর্ষা করবে।” (মেশকাত, হাদিস: ৫০১১; সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস: ২৩৯০)।
পরস্পরকে ভালোবাসার গুরুত্ব
হাদিসে উল্লেখ আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবাসলে কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহর বিশেষ ছায়ায় ছায়া পাবে। আল্লাহ বলেন, “আজ এমন দিন যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৩১৫)।
এটি শুধুমাত্র বিশ্বাসী এবং নবী অনুসারীদের জন্য নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সংহতির উদাহরণ। যারা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি, ভালোবাসা ও ন্যায়পরায়ণতা প্রদর্শন করে, তারা কিয়ামতের দিনে আলোকিত হবে।
নবী ও শহিদদের ঈর্ষা
এই ঈর্ষা কেবল ভেতরের নৈতিক ও আত্মিক মর্যাদা বোঝায়। নবী ও শহিদরা ঈর্ষান্বিত হবেন তাদের জন্য যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সৎ কাজ এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করবে। এটি মানুষের আত্মিক উন্নতি ও পরকালের জন্য প্রস্তুতির প্রতীক।
সামাজিক ও মানবিক প্রেক্ষাপটে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা: পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও ভালোবাসা শুধুমাত্র মুমিনদের মধ্যে প্রভূত শক্তি ও মর্যাদা এনে দেয়, বরং তা কিয়ামতের দিনের জন্য আলোকিত ও বরকতময় জীবন নিশ্চিত করে।
কিয়ামতের বিভীষিকাময় দিনে আলোকিত চেহারার মানুষরা নবী ও শহিদদের ঈর্ষার কেন্দ্রবিন্দু হবে। যারা পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে, তাদের জন্য আল্লাহ বিশেষ নূর ও ছায়া প্রদান করবেন। এটি মুসলিম উম্মতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যা তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে।
এম আর এম – ১১৯৪, Signalbd.com