বাংলাদেশ

আদালত ঘোষিত পলাতক ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবেন না: ইসি সানাউল্লাহ

Advertisement

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আদালত কর্তৃক ঘোষিত পলাতক আসামিরা আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বিদ্যমান আইনে ফৌজদারি মামলায় পলাতক হলেও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু নতুন আরপিও (Representation of the People Order) সংশোধনে সেই সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে।

আইনে বড় পরিবর্তন আসছে

বুধবার রাজধানীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ইসি সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, “যে কোনো ফৌজদারি অপরাধে আদালত ঘোষিত পলাতক আসামিরা আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।” এর ফলে বহু বিতর্কিত প্রার্থী স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্বাচনের বাইরে থাকবেন।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও প্রতীক স্থগিতের বিধান

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সানাউল্লাহ আরও জানান, যদি সরকার কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত করে, তবে সেই দলের নিবন্ধন ও নির্বাচনী প্রতীকও স্থগিত থাকবে। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বচ্ছতা বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, নতুন সংশোধনে ভোট শুরুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আবারও প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভোট শুরু হতো। এখন প্রিজাইডিং অফিসার চাইলে এক বা একাধিক কেন্দ্র এমনকি পুরো আসনের ভোট স্থগিত বা বাতিল করতে পারবেন। এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো প্রার্থীর হলফনামায় তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হলে তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল করার ক্ষমতাও থাকবে কমিশনের হাতে।

নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণ

নির্বাচনী খরচ প্রসঙ্গে ইসি জানান, একজন প্রার্থী ভোটারপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা খরচ করতে পারবেন। ন্যূনতম ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা থেকে শুরু করে আসনের ভোটার সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান (ডোনেশন) গ্রহণ করতে পারবে।

বিদেশে সম্পদের তথ্য জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা

বিদ্যমান আইনে কেবল দেশের ভেতরের সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান থাকলেও নতুন সংশোধনীতে বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্যও দিতে হবে। অর্থাৎ প্রার্থী বা তাদের পরিবারের বিদেশে থাকা যেকোনো সম্পদের ঘোষণা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে থাকার বিধিনিষেধ

ইসি সানাউল্লাহ আরও বলেন, নতুন সংশোধিত আইনে প্রার্থীরা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না। এর উদ্দেশ্য হলো শিক্ষা খাতকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্বাচনী প্রভাব থেকে রক্ষা করা।

কেন এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ

বিশ্লেষকদের মতে, আদালত ঘোষিত পলাতক ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ বন্ধ করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি বড় পদক্ষেপ। অতীতে এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে ফৌজদারি মামলার আসামিরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। নতুন আইন কার্যকর হলে প্রার্থীদের যোগ্যতা ও সততার বিষয়টি নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই সংশোধনীতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। ক্ষমতাসীন দল স্বচ্ছতা বৃদ্ধির দাবি তুললেও বিরোধী পক্ষ এটি ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে নির্বাচনের বাইরে রাখার আশঙ্কা প্রকাশ করতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, এ পরিবর্তন কেবলমাত্র জনগণের স্বার্থে আনা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন যে পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। আদালত ঘোষিত পলাতক আসামিরা প্রার্থী হতে না পারা, বিদেশি সম্পদের তথ্য জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা এবং প্রিজাইডিং অফিসারের ক্ষমতা বৃদ্ধি—সব মিলিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় হলো, এসব সংশোধনী বাস্তবায়নের পর নির্বাচনী অঙ্গনে কী পরিবর্তন আসে।

এম আর এম – ১১৬৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button