বাংলাদেশ

৯ সেপ্টেম্বরেই ডাকসু নির্বাচন: আপিল বিভাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অবশেষে নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। হাইকোর্টের আগের স্থগিতাদেশের ওপর আপিল বিভাগ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দিয়ে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান আইনি জটিলতা কাটিয়ে নির্বাচনের পথে সব বাধা দূর হলো।

আপিল বিভাগের আদেশের প্রেক্ষাপট

আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি শেষে এই গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেন। শুনানি বেলা ১১টার পর শুরু হয়। এর আগে, হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রাখার জন্য আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ইতিমধ্যেই আগের দিন স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন, যেখানে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) এই আদেশ দেন। আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের ইতিহাস

হাইকোর্ট সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। একই দিনে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। এই আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে ছাত্র এবং রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।

নির্বাচনের আগে রিট এবং আইনি চ্যালেঞ্জ

গত ২৮ আগস্ট, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে “অপরাজেয় ৭১” এবং “অদম্য ২৪” প্যানেলের বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করেন।

রিটের মাধ্যমে প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও আপিল বিভাগের আদেশের পর সেই বাধা দূর হয়েছে। আদালতের এই সিদ্ধান্তে নির্বাচন নির্ধারিত দিনেই অনুষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।

নির্বাচনের তারিখ এবং প্রার্থীদের পরিস্থিতি

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ এবং বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই তাদের নিজস্ব প্যানেল ঘোষণা করেছে। এবার নির্বাচনে পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে প্রায় ১০টি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। নির্বাচনী মঞ্চে প্রতিটি প্যানেলই তাদের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছিল।

নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্যানেল ও প্রতিদ্বন্দ্বীতা

  • ছাত্রদল: বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ও প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে এবারও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের সমন্বয় করেছে।
  • ছাত্রশিবির: ধর্মীয় ভিত্তিক ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, যারা বিভিন্ন প্রার্থী ও পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনী মঞ্চে রয়েছেন।
  • গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ: স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী এই সংগঠনও নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে।
  • বামপন্থি ছাত্রসংগঠন: মুক্তিযুদ্ধ ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে কেন্দ্র করে ভোটাভুটি করতে প্রস্তুত।

নির্বাচনের এই বৈচিত্র্য শিক্ষার্থীদের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগে নতুন বিকল্প ও প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করছে।

নির্বাচনের গুরুত্ব

ডাকসু নির্বাচন শুধু ছাত্রসংগঠন নয়, এটি দেশের তরুণ নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হন।

এছাড়া, নির্বাচনের ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা, দলীয় সাংগঠনিক দক্ষতা এবং নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই নির্বাচন ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলোতে যথাযথ ব্যবস্থাপনা, ভোটার তালিকা যাচাই এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রযোজ্য করা হবে। এছাড়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুষ্ঠু ভোটাভুটি নিশ্চিত করতে প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রভাব

  • শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে।
  • বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও প্যানেলগুলোর কার্যক্রমে নতুন গতি আসবে।
  • ভবিষ্যৎ নেতৃবৃন্দের চিহ্নিতকরণ সহজ হবে।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হলে তা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সাম্প্রতিক সংবাদ ও আপডেট

  • ডাকসু নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন।
  • ভোটার তালিকা চূড়ান্ত।
  • ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের নির্বাচনী প্রচারণা ত্বরান্বিত করেছে।
  • আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াবে, অন্যদিকে এটি ভবিষ্যৎ নেতা তৈরির মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে। আপিল বিভাগের আদেশের ফলে নির্বাচনের পথে আর কোনো আইনি বাধা রইল না। ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচিত নেতাদের চূড়ান্ত করবে।

এবারের ডাকসু নির্বাচন শুধুমাত্র ছাত্ররাজনীতির নয়, দেশের তরুণ সমাজের নেতৃত্ব চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button