
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজ্জা উপত্যকায় বর্বর হামলা চালিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১০৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলি বাহিনী।
কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরার এ তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, গাজ্জার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্রটির (গাজ্জা সিটি) নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে ইসরাইল। যেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এ কারণে আরও বর্বর হয়ে উঠেছে দখলদার বাহিনী।
মঙ্গলবার একদিনেই গাজ্জা জুড়ে অন্তত ১০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বিশেষ করে আল-সাবরা এলাকায় ইসরাইলি হামলা ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল ধ্বংস করে দিয়েছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩২ জন ত্রাণ সহায়তার খোঁজে গিয়ে প্রাণ হারান। যার মধ্যে সাতজন শিশু। তারা সবাই দক্ষিণ গাজ্জার খান ইউনিসের নিকটবর্তী আল-মাওয়াসি এলাকায় পানির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ইসরাইলি ড্রোন হামলায় প্রাণ হারান।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৩ জন অনাহারে মারা গেছেন। এতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধাজনিত মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬১। এর মধ্যে ৮৩ জন মারা গেছেন ২২ আগস্ট গাজ্জায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক মাসে গাজ্জায় প্রবেশ করা মানবিক সহায়তার ট্রাক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ।
গাজ্জার মানবিক সংকট: খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সংকট
গাজ্জা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর অবরোধ ও হামলার কারণে মানবিক পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবার অভাব জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি বারবার সতর্কতা সত্ত্বেও ইসরাইলি বাহিনী তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, গাজ্জায় বর্তমানে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে অধিকাংশই মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ইসরাইলি অবরোধের কারণে সহায়তা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজ্জায় খাদ্য ও পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অনেক পরিবার একবেলা খাবার না খেয়েই দিন কাটাচ্ছে। পানির অভাবে শিশুরা ডিহাইড্রেশনের শিকার হচ্ছে। চিকিৎসা সেবার অভাবে সাধারণ রোগের চিকিৎসাও পাওয়া যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: নীরবতা ও সমালোচনা
গাজ্জায় ইসরাইলি হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে নীরবতা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও দেশগুলো ইসরাইলের এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদে গাজ্জার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো কার্যকর প্রস্তাব পাস হয়নি। অনেক দেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি তুললেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
বিশ্ব নেতারা বারবার গাজ্জায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও ইসরাইল তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ: সাহস ও দৃঢ়তা
গাজ্জায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলার মুখেও ফিলিস্তিনিরা তাদের প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন প্রতিরোধ গোষ্ঠী ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সাহস ও দৃঢ়তা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই সংগ্রাম বিশ্ববাসীর কাছে একটি অনুপ্রেরণার উৎস।
গাজ্জার ভবিষ্যৎ: অন্ধকার না আলোর দিশা?
গাজ্জার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন। ইসরাইলি হামলা ও অবরোধের কারণে গাজ্জার অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত ভেঙে পড়েছে। বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বেড়েছে।
তবে, ফিলিস্তিনিরা তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিশ্বাস করে, একদিন তাদের মাতৃভূমি স্বাধীন হবে। আন্তর্জাতিক মহল যদি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তবে গাজ্জার পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যেতে পারে।
মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর সময়
গাজ্জায় ইসরাইলি হামলা ও অবরোধের কারণে মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই এই সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।
ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ববাসীকে একযোগে কাজ করতে হবে। গাজ্জার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মানবাধিকার রক্ষায় সহায়তা করতে হবে।
MAH – 12627, Signalbd.com