আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কুনার প্রদেশে রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কেউ না কেউ মারা গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেক মানুষ চাপা পড়ে আছে এবং জরুরি সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। আফগান সরকার এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থাগুলো দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান
ভূমিকম্পের মূল কেন্দ্র নূর গুল জেলা। মোহাম্মদ আজিজ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা তার দশজন আত্মীয়কে হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন তার সন্তান। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৮০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহতের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারের বেশি।
ভূমিকম্পের সময় পরিস্থিতি
ভূমিকম্প অনুভূত হলে জিয়াউল হক মোহাম্মদী তার ঘরে বসে ছিলেন। তিনি জানান, কম্পনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে সঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। পুরো এলাকা ভয় ও উদ্বেগে ভরে ওঠে, মানুষ রাতে সারা রাত সজাগ থাকে। পরাঘাত ও কম্পনের সম্ভাব্য পুনরাবৃত্তি আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কর্মসূচি
তালেবান সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখন আর মরদেহ খোঁজা হচ্ছে না। উদ্ধারকারীদের মূল মনোযোগ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধারে। ভূমিকম্পের কারণে বহু সড়ক ধ্বংস হয়েছে, যার ফলে হেলিকপ্টার ও অন্যান্য ত্রাণ বাহিনীকে সাহায্য করতে হচ্ছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে, জরুরি খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরবরাহ করছে।
প্রভাব ও মানবিক সংকট
ভূমিকম্পে প্রায় সমস্ত বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষরা তাদের ঘর, মালামাল ও জীবিকার উৎস হারিয়েছেন। স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয় এবং জরুরি চিকিৎসা প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য এবং সরকারি সহায়তা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এই বিপর্যয় এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে এবং দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন প্রয়োজন।
পূর্বপ্রেক্ষিত ও সাম্প্রতিক ভূমিকম্প
আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। গত কয়েক বছরেও এই অঞ্চলে বহু ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প ঘটেছে, যা মানবিক ও আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে। এই প্রদেশের অনেক স্থাপনাই দুর্বল নির্মাণশৈলীর, যা ভূমিকম্পের সময় বেশি ক্ষয়ক্ষতির কারণ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আফগানিস্তানের এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উদ্ধার ও পুনর্বাসনের প্রস্তুতি বাড়ানো উচিত। তালেবান সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতে আরও পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে, তাই সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কার করা জরুরি।
আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশে সংঘটিত ভূমিকম্পে ব্যাপক মানবিক ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কারও না কারও মৃত্যুর ঘটনা সমাজে শোক ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য অপরিহার্য।
এম আর এম – ১১৩৯, Signalbd.com



