আঞ্চলিক

নিহত শিশুর পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে এসআই ক্লোজড

Advertisement

আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাসুদ রানা নিহত শিশু জোনায়েদের পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ক্লোজড করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ অনুসারে, এসআই মাসুদ রানা তাদের কাছে তদন্তের জন্য অর্থ দাবি করেছিলেন, যা প্রদান করার পরও তিনি কার্যকর তদন্ত চালাননি। পরে র‌্যাব-৪ বিশেষ দল ঘটনাস্থল থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে এবং অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে।

কীভাবে ঘটে ঘটনা

শিশু জোনায়েদ ১৬ আগস্ট নিখোঁজ হয়। পরদিন তার পরিবার আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এসআই মাসুদ রানা এই জিডি তদন্তের দায়িত্ব পান। তবে পরিবারের অভিযোগ, তিনি জিডি তদন্তের জন্য তাদের কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরিবারের অক্ষমতার কারণে পরে মাত্র দেড় হাজার টাকা গ্রহণ করেন। টাকা নেওয়ার পরও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে পারিপার্শ্বিকতায় অবহেলা করেন।

পরিবার যখন নিয়মিত তদন্তের জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন, তখন এসআই মাসুদ রানা তাঁদের বিরক্ত করে জানান, থানায় আরও ২০–২৫ জন নিখোঁজ রয়েছে, তাদের কেউ এতটা বিরক্ত করে না, যতটা আপনারা করছেন। শেষ পর্যন্ত পরিবার র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, নিখোঁজের ১৩ দিন পর শিশুর মরদেহ উদ্ধার এবং অপহরণকারী গ্রেপ্তার হয়।

হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও গ্রেপ্তার

র‌্যাব-৪ এর বিশেষ দল ফারুখনগর এলাকার একটি জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় অপহরণকারী মোরসালিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানা যায়, মোরসালিন একই বাড়ির ভাড়াটিয়া ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে অর্থ বা ব্যক্তিগত বিবাদ থাকার সম্ভাবনা তদন্তে দেখা হচ্ছে।

অভিযুক্ত এসআইর ক্লোজড ও পুলিশি প্রতিক্রিয়া

আশুলিয়া থানার ওসি আব্দুল হান্নান নিশ্চিত করেছেন, অভিযুক্ত এসআই মাসুদ রানা রোববার ক্লোজড করা হয়েছে এবং পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, মাসুদ রানা দুই মাস আগে থানায় যোগ দেন এবং সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ছুটিতে ছিলেন। ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

নিখোঁজ শিশুর পরিবারের কাছে ঘুষ নেওয়ার ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ এবং শিশুর পরিবার পুলিশের প্রতি বিশ্বাস হারানোর অভিযোগ তুলেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা প্রশাসনিক সেবা ও নৈতিকতার জন্য মারাত্মক ক্ষতি।

পূর্বপ্রেক্ষিত ও অনুরূপ ঘটনা

বাংলাদেশে শিশু অপহরণ ও হত্যার ঘটনা দমনের ক্ষেত্রে পুলিশের অবহেলা ও ঘুষের অভিযোগ নতুন নয়। ইতিপূর্বে কয়েকটি ঘটনারও উদাহরণ পাওয়া গেছে যেখানে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়েছে। এই ধরনের প্রশাসনিক ব্যর্থতা আইন শৃঙ্খলার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমায়।

বিশেষজ্ঞ মতামত

আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পুলিশি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কখনোই ব্যক্তিগত স্বার্থে তদন্তের দায়িত্ব সম্পন্ন করতে পারবেন না। তারা সতর্ক করেছেন, প্রশাসনের দায়িত্ব ও জনসেবার প্রতি দায়িত্বশীলতা বজায় রাখতে হবে। এছাড়া, সরকারি পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

পরিশেষে

শিশু জোনায়েদের হত্যাকাণ্ড ও তদন্তে অবহেলা এবং ঘুষ গ্রহণের ঘটনায় প্রশাসনের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এসআই মাসুদ রানার ক্লোজড হওয়ার সিদ্ধান্ত জনসাধারণকে কিছুটা সন্তুষ্টি দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশি সেবা আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে।

এম আর এম – ১১৩৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button