বাংলাদেশ

বাংলাদেশি ৩ ট্রলারসহ ১৫ জেলেকে ধরে নিয়ে গেলো আরাকান আর্মি

Advertisement

কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ-পূর্ব সাগরে আবারও বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ করেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এবার ৩টি ফিশিং ট্রলারসহ ১৫ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত এক মাসে একই ধরনের ঘটনায় ৭৮ জন জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, সমুদ্রপথে নিরাপত্তার অভাবেই বারবার এমন ঘটনা ঘটছে।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ

গতকাল রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের সীতা নামক এলাকায় মাছ ধরার সময় আরাকান আর্মির সশস্ত্র সদস্যরা স্পিডবোটে করে এসে তিনটি ট্রলারকে জিম্মি করে। জেলেদের পরিবার ও ট্রলার মালিকদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এই অপহরণ ঘটে অস্ত্রের মুখে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন:

“আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়েছি যে, তিনটি ট্রলার এবং ১৫ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। এর আগে ওই এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।”

জিম্মি হওয়া ট্রলারগুলোর নাম ও মালিক

  • মো. আফসারের মালিকানাধীন ট্রলার
  • আবু তাহেরের মালিকানাধীন ট্রলার
  • মোহাম্মদ আলমগীরের মালিকানাধীন ট্রলার

এছাড়া আফসারের ভাই নুরুল ইসলামের একটি ট্রলার পালিয়ে এসে খবর দেয়। ঘটনার পরপরই স্থানীয় জেলেরা আতঙ্কে মাছ ধরার কাজ বন্ধ করে ঘাটে ফিরে এসেছে।

পূর্ববর্তী অপহরণের ঘটনা

এটি নতুন কিছু নয়। গত ৫ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ২৩ দিনে ১০টি ট্রলার ও ৬৩ জন জেলে অপহৃত হয়েছে। এর ফলে গত ২৬ দিনে মোট ৭৮ জন জেলে নিখোঁজ।

আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো:

  • ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত আরাকান আর্মি ২৮২ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।
  • এর মধ্যে ১৮৯ জনকে ফেরত আনা হয়েছে বিভিন্ন সময় আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে।
  • ২৭টি নৌযানও উদ্ধার করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র প্রচেষ্টায়।

আরাকান আর্মি কারা?

আরাকান আর্মি হলো মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তারা মূলত স্বাধীনতা দাবি করে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায়। বাংলাদেশের জেলেদের অপহরণের পেছনে তাদের মূল উদ্দেশ্য মুক্তিপণ আদায় করা।

তাদের কৌশল সাধারণত এমন:
✔ সীমান্তবর্তী সমুদ্রপথে ফিশিং ট্রলারকে ঘিরে ফেলা
✔ জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা
✔ মুক্তিপণের জন্য পরিবার বা মালিকের কাছে যোগাযোগ করা

কেন বারবার এমন হচ্ছে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েকটি কারণে এই সমস্যা বেড়ে গেছে:

  1. সীমান্তবর্তী সমুদ্রে নিরাপত্তা কম
  2. বাংলাদেশ-মিয়ানমার কূটনৈতিক টানাপোড়েন
  3. আরাকান আর্মির অর্থের অভাব, তাই মুক্তিপণ সংগ্রহের পথ বেছে নেয়

জেলেদের পরিবারের আহাজারি

জিম্মি হওয়া জেলেদের পরিবার এখন গভীর শঙ্কায়। তারা বলছে, প্রতিবারই জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে যায়, কারণ মাছ ধরাই তাদের জীবিকার একমাত্র উপায়।

এক স্বজনের বক্তব্য:

“আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, যেন দ্রুত আমাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে আনা হয়। আগেও এমন হয়েছে, অনেক টাকা দিয়ে মুক্তিপণ দিতে হয়েছে। এবার কিভাবে দেব জানি না।”

সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান

বিজিবি ও কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জ হলো, ঘটনাস্থল অনেকটা নির্জন সাগর এলাকা, যেখানে মিয়ানমারের জলসীমার কাছাকাছি হওয়ায় অপারেশন চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।

সমস্যার সমাধান কী হতে পারে?

✔ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে যৌথ টহল বাড়ানো
✔ জেলেদের GPS ট্র্যাকিং সিস্টেম দেওয়া
✔ সমুদ্রপথে সুরক্ষা বলয় তৈরি করা
অপহৃত জেলেদের মুক্তির জন্য কূটনৈতিক আলোচনা

টেকনাফের জেলেদের জন্য সমুদ্রপথ এখন আতঙ্কের আরেক নাম। প্রতিবারের মতো এবারও প্রশ্ন উঠছে: কবে শেষ হবে এই অপহরণ? সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে, নইলে জেলেরা নিরাপত্তাহীনতার কারণে জীবিকা হারানোর মুখে পড়বে।

MAH – 12591,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button